পারিবারিক বিরোধ: দুই ভাইয়ের ভয়ে ৪ মাস বাড়ির বাইরে নজরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের শ্রীনদ্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম। জায়গা-জমি সংক্রান্ত পারিবারিক  বিরোধের কারণে প্রাণনাশের শঙ্কায় গত ৪ মাস যাবৎ নিজ বাড়িতেই ঢুকতে পারছেন না তিনি।

এ ঘটনায় গত ২০ মার্চ বাদী হয়ে কবিরহাট থানায় আপন ছোটো দুই ভাই মো. জাহিদুল ইসলাম ও মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মো. নজরুল ইসলাম।

দায়েরকৃত এ অভিযোগপত্রে বলা হয়, বর্তমানে আমি ঢাকায় কর্মরত আছি। আমি দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিবাদীদের সঙ্গে জায়গা-জমি সংক্রান্ত এবং পারিবারিক বিষয় নিয়ে আমার বিরোধ রয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পারিবারিকভাবে একাধিকবার সমাধানের চেষ্টা করলেও তারা কোনো সিদ্ধান্ত মানতে রাজি হননি। এমনকি তারা আমাকে এবং আমার স্ত্রী-সন্তানকে বাড়ীতে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে।

বিবাদীদের অত্যাচারে অতিষ্ট এবং নিরুপায় হয়ে গত ১৫ মার্চ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সামাজিকভাবে শালিশী বৈঠকের আয়োজন করি। ওই বৈঠক চলাকালে বিবাদীরা আমাকে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করেন। ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গেও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন অভিযুক্তরা।

এমনকি এ বিষয়ে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিলে আমাকে হত্যার হুমকি দেন তারা। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় কোনো প্রতিবাদ না করে আমি ঘটনাস্থল থেকে চলে আসি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার-সহ অনেকের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।

এছাড়া বর্তমানে আমি এবং আমার পরিবার নিজ বাড়ীতে ঢোকার চেষ্টা করলে প্রাননাশের আশংকা রয়েছে।

এ ঘটনার সাক্ষী ছিলেন, মো. হাফিজুর রহমান (সাবেক চেয়ারম্যান, বাটইয়া ইউনিয়ন), মো. জহিরুল ইসলাম, মো. তাজুল ইসলাম, মো. এয়াকুব, মাস্টার অজি উল্যাহ (সহকারী প্রধান শিক্ষক, কাচারিহাট উচ্চবিদ্যালয়)।

পরবর্তীতে কবিরহাট থানায় গত ১১ জুন আরেকটি অভিযোগ দায়ের করা হয়, এতে বলা হয়, শ্রীনদ্দি গ্রামের খাল পাড়ে আমার মৎস্য খামারের চারদিকে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা লাগানো হয়েছে। আত্মসম্মান রক্ষার্থে আমি এখন বাড়ীতে যাই না। এই সুযোগে তারা আমার মৎস্য খামার থেকে গত ১৫-২০ দিন আগে পরপর ২ বার সব মাছ লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া খামারের চারদিকে থাকা গাছপালা থেকে নারকেল ও আম পেড়ে নিয়া যায়। মাঝে মাঝে অন্যান্য ভালো ভালো গাছ গুলো কেটে নিয়া যায়।

এছাড়া আমার পরিবারকে ঢাকায় গিয়েও নানান ভাবে হুমকিধমকি দিচ্ছে। বর্তমানে আমি আতঙ্কে আছি। উচ্চ আদালতেও আমি অভিযোগ দায়ের করেছি।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম বাংলাবার্তাকে বলেন, তিনি বাড়িতে আমাদের কারণে ঢুকতে পারছে না, এটা সত্য নয়। উনার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা আছে, হয়তো এই জন্য তিনি বাড়িতে আসেন না। তাছাড়া তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকায়।

সালিশে ভুক্তভোগী নজরুল ইসলামের গায়ে হাত তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম বলেন, নিজের কিছু লোক নিয়ে উনি সালিশের আয়োজন করেছিলো। যেখানে সবাই উনার লোক, সেখানে উনার গায়ে হাত তোলার প্রশ্নই আসে না। এছাড়া যেই মৎস্য খামারের কথা উনি বলছে, সেটাও আমাদের সবার জায়গা দখল করার জন্য, উনি এ কাজ করেছে। তিনি কয়েকদিন আগে লোকজন দিয়ে আমাকে মারধরও করেছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বাদী এবং বিবাদী উভয়ের বাবা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নজরুল জোরপূর্বক আমার ঘরের জায়গাটাও আমার কাছ থেকে রেজিস্ট্রি করে নিয়ে গেছে। যার কারণে আমার বাকি ছেলেমেয়েদের এখন কিছুই নেই। তাই দীর্ঘদিন বাড়ির জায়গাটা পুনরায় আমার নামে রেজিস্ট্রি করে দিতে বলছি আমি। কিন্তু নজরুল সেটা শুনেনি।

বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টি সত্য কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মা এই জায়গা আমার নামে দিয়ে গেছিলো। সে জোরপূর্বক জায়গাটা আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। ছেলেমেয়েদের থাকার জন্য হলেও আমার জায়গাটা এখন দরকার। যতদিন সে এটা আমার নামে রেজিস্ট্রি করে দিবে না, ততদিন সে বাড়িতে ঢুকতে পারবে না। এর জন্য আমার যদি ফাঁসি হয়, হোক। এছাড়া খামারের মাছ বিক্রি ও সালিশে নজরুল ইসলামের উপর ছোটো ভাইদের চড়াও হওয়ার বিষয়টিও স্বীকার করেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে নজরুল ইসলাম বাংলাবার্তাকে বলেন, পুরো পরিবার এক হয়ে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে আমার করা অভিযোগগুলো সত্যতা উনাদের বক্তব্যের মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়েছে। তাছাড়া বাড়ির যেই জায়গাটির বিষয়ে আমার বাবা মামলা করেছিলো, দুই তিন বছর আগে তিনি নিজেই মামলাটি প্রত্যাহার করেছিলো। এখন কেন আবার নতুন করে গত কয়েকদিন আগে মামলাটি পুনরায় করলো? এসব কিছুই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

এ বিষয়ে কবিরহাট থানার এসআই বিকাশ সাহা বাংলাবার্তাকে বলেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য উনাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাদি এবং বিবাদীর বাবাকে পেয়েছিলাম। এছাড়া আর কোনো সাক্ষীকে পাইনি। বাদি নজরুল ইসলামকে বলেছিলাম আমার সঙ্গে দেখা করতে এবং সাক্ষীদের নিয়ে আসতে। প্রকৃতপক্ষেই যদি প্রাণনাশের হুমকি থাকে, তাহলে আমরা একটি জিডি করে আদালতে পাঠিয়ে দিলে, সেখানেই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা হবে।