মাদরাসা শিক্ষা উন্নয়নে বর্তমান সরকারের ভূমিকা


মোঃ আব্দুল হান্নান

স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যূদয়ের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নির্দেশনায় মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও কর্মমুখী করার উদ্যোগ গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড গঠিত হয় এবং ঢাকাস্থ সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ক্যাম্পাসে এর কার্যক্রম শুরু হয়।

মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ এবং ফাজিল (স্নাতক ) ও কামিল (স্নাতকোত্তর ) পর্যায়ের পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচীর আধুনিকীকরণ শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিসহ মাদরাসা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ন্যস্ত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় সংসদে “ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৩” পাস করা হয়। এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর,আলেম ওলামাদের দীর্ঘ দিনের দাবী পূরণ করা হয়।

মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা

২০১৫ সালের আগস্ট থেকে কাকরাইলের জাতরি স্কাউট ভবনে এ দপ্তরের কার্যক্রম শুরু হয়। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৭ হাজার ৬১৮টি এম্পিও ভূক্ত মাদরাসায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮০০ জন শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রতি মাসে বেতন ও ভাতা দেওয়া হচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১ হাজার ৫১৯টি এবতেদায়ী মাদরাসায় ৪ হাজার ৫২৯ জন শিক্ষককে বেতন  ভাতা দেওয়া হচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক এবং একাডেমিক বিষয়ে মনিটরিং এর সার্বিক দায়িত্ব মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের। এমপিও ভূক্তকরণ, শিক্ষক এমপিও ভূক্তকরণ সহ মাদরাসা শিক্ষার একাডেমিক এবং কাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপারে মন্ত্রনালয়কে পরামর্শ দেয়া এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করা এ দপ্তরের প্রধান কাজ।

মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন ছাড়করণের জন্য পৃথক সফটওয়ার (মেমিস) স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রনালয়কে দুই ভাগ করে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ প্রতিষ্টা করা হয়। বাংলাদেশ মাদরাসা টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা (গাজীপুর), কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্স এর সমমান সনদ প্রদান, বঙ্গবন্ধু কতৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর উপজেলা অফিস স্থাপন, দারুল আরকাম নামে সারা দেশে ইবতেদায়ী (প্রাইমারী) মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, দেশের সকল উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ চলছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্বের সুযোগ সুবিধা ও পরিধি বেড়েছে।

পহেলা জানুয়ারী ১ম থেকে নবম শেনি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ, মাদরাসার বৃত্তির পরিধি বৃদ্ধি, উপবৃত্তি চালু, ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা, ইমাম প্রশিক্ষণের পরিসর বৃদ্ধি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীন মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রসার ও অর্থ বরাদ্দ, অসংখ্য মাদরাসায় শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, আলিয়া মাদরাসায় ১ হাজার ৩৫টি ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন, আরও ১ হাজার নির্মাণাধীন। ৭৭টি মাদরাসায় ফাজিল অনার্স কোর্স চালু ও ৩০টি মাদরাসায় মাস্টার্স কোর্স চালু।

স্কুল কলেজের শিক্ষকদের সাথে মাদরাসা শিক্ষকদের বেতনে সমতা বিধান, মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য (বিএমইডি) কোর্স চালু, যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন, ইবতেদায়ী শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, সতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার জন্য পৃথক জনবল কাঠামো, লক্ষাধিক শিক্ষকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, প্রতিবছর পর্যায়ক্রমে এমপিও ভুক্তকরণের প্রতিশ্রুতি।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন, ২৮১ টি মাদরাসায় কারিগরি শিক্ষা কোর্স চালু, নতুন জনবল কাঠামো জারি এবং পদের সংখ্যা বৃদ্ধি,  ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের প্রসার ও অর্থ বরাদ্দ, মাদরাসায় শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন এবং মাদরাসায় মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। যা মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রমকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে।

লেখক: সেকশন অফিসার, মাদ্রাসা পরিদর্শন দফতর, ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়