Thursday, November 13, 2025
Homeআন্তর্জাতিকভিক্ষা করে খাবার জোগাতেন রেনুকা, এখন বার্ষিক আয় ৩৮ কোটি টাকা!

ভিক্ষা করে খাবার জোগাতেন রেনুকা, এখন বার্ষিক আয় ৩৮ কোটি টাকা!

বার্তা ডেস্ক:
 

ছোটবেলায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে খাবার ভিক্ষা করে বেড়াতেন তিনি। বেঁচে থাকার জন্য কখনো গাছ থেকে নারকেল পাড়ার কাজ করেছেন।

আবার কখনো প্লাস্টিক কোম্পানির লেবারের কাজ, কখনো সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি আবার কখনো লাশবাহী গাড়ির ড্রাইভারের কাজও করেছেন।

বর্তমানে সেই মানুষটি কয়েক কোটি টাকার মালিক। তার কোম্পানির লাভ বছরে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। নিজ কর্মগুণে পরিশ্রমী এই ব্যক্তি জিরো থেকে হয়ে উঠেছেন হিরো। তার উত্থান কোনো সিনেমার গল্পের চেয়েও কম নয়।

তার নাম রেনুকা আরাধ্যা। জন্ম বেঙ্গালুরুর একটা ছোট গ্রামে। বাবা ছিলেন একজন ধর্মযাজক। তাই তার কোনো নির্দিষ্ট উপার্জনও ছিলো না। সৃষ্টিকর্তার উপাসনাতেই তার অধিকাংশ সময় কেটে যেতো।

চজনের সংসার চলতো বাড়ির পিছনের একটা জমিতে চাষাবাদ করে। যে বছর ভালো ফসল ফলতো না, সে বছর বাবার সঙ্গে লোকের বাড়িতে বাড়িতে চাল, গম ভিক্ষে করে বেড়াতেন তিনি। তবে তার বয়স যখন মাত্র ১৫ বছর, তখন বাবা মারা যান।

বিবাহিত বড় ভাই পরিবারের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায়, মা ও দুই বোনের যাবতীয় দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। সেসময় পড়াশোনা ছেড়ে বরফ কলের মজুর হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। সেখান থেকে কখনো প্লাস্টিক কোম্পানির মজুর।

কখনো বিভিন্ন কোম্পানিতে লেবারের কাজ করতে থাকেন। এরপর হঠাৎ মা অসুস্থ হয়ে পড়ায়, ঘর ও ছোট ছোট দুই বোনকে সামলানোর জন্য মাত্র ২০ বছর বয়সে বিয়ে করে নিতে হয় তাকে।

ততদিনে লেবারের কাজ ছেড়ে একটা কারখানায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করছেন তিনি। আর এখানেই রাতের বেলা ড্রাইভারদের কাছ থেকে গাড়ি চালানোর কাজে ভালো উপার্জন হয় শুনে ড্রাইভিং শেখার ভূত মাথায় চাপে।

তিনি বুঝতে পারেন, ড্রাইভিংয়ের কাজ কখনো বন্ধ হবে না। সেসময় পাশে এসে দাঁড়ান তার স্ত্রী। কাপড়ের ফ্যাক্টরিতে কাজ করে জমানো টাকা ও বিয়ের আংটি বিক্রি করে তিনি স্বামীকে ভর্তি করান ভালো একটি ড্রাইভিং স্কুলে।

সেখান থেকে ড্রাইভিং শিখে, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বেরিয়েই একটা ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে লাশবাহী একটি গাড়ি চালান। সেখানে ৪ বছর ধরে ৩০০ এরও বেশি মৃতদেহ বহন করার পর, তিনি বুঝতে পারেন এবার সময় এসেছে নিজে কিছু করার।

২০০০ সালে ব্যাংক থেকে দের লাখ টাকা লোন নিয়ে নিজের প্রথম গাড়িটা কিনে ফেলেন তিনি। এরপর কঠোর পরিশ্রম আর হার না মানা মানসিকতায় ভর করে পরবর্তী চার বছরের মধ্যে আরও ছয়টি গাড়ি কিনে ফেলেন এবং সিদ্ধান্ত নেন তার কোম্পানির গাড়ি ২৪ ঘণ্টাই রাস্তায় থাকবে।

তাই ছয়টি গাড়ির জন্য মোট ১২ জন ড্রাইভারকে কাজে রাখেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে তার গাড়িগুলোকে আমাজন, লিঙ্কডিন, ওয়ালমার্ট, জেনারেল মোটরসের মতো বড় বড় কোম্পানি তাদের কাজে ভাড়া নিতে শুরু করে। এভাবে কয়েক বছরের মধ্যে তার কেনা গাড়ির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০০টি।

এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এবার ব্যবসা আরও বাড়াতে হবে। তাই জনসাধারণকে ট্যাক্সি সার্ভিস দেয়ার জন্য তিনি রাস্তায় নামান নিজস্ব কোম্পানির অনলাইন বুকিং ট্যাক্সি। আজ রেনুকা আরাধ্যা নামের সেই মানুষটা মোট ১৩০০ গাড়ির মালিক।

একটি চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন স্বপ্ন দেখা আর শেখা কখনো থামাতে নেই। আমি কোনোদিনও কলেজে যাইনি, অথচ বড় বড় কলেজের ছেলে-মেয়েরা আমার কাছে এসে বিজনেস অপারেটিং শেখে। যে মানুষ পরিবার, কর্মী, ছোট-বড় সবাইকে সম্মান করবে, সে জীবনে একদিন সফল হবেই।

 
এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments