নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বের নানা দেশে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের অসংখ্য নাগরিক। যাদের মধ্যে বিশাল অংশই শ্রমিক। দেশে টাকা পাঠাতে গিয়ে টাকা খোয়ানোর ঘটনা ঘটেছে অনেক। বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা আনা বা পাঠানোর ক্ষেত্রে একাধিক সহজ মাধ্যম রয়েছে। জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা, বিকাশ সহ বেশকিছু মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশ থেকে টাকা আনা এখন খুব সহজ। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা আনার কয়েকটি উল্লেখ্যযোগ্য মাধ্যম সম্পর্কে।
বিকাশ – bKash:
বিকাশ এর সেবা এতোটাই বিস্তৃত যে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর সুবিধা অফার করছে বিকাশ। অনুমোদিত ও তালিকাভুক্ত ফরেইন ব্যাংক, মানি ট্রান্সফার অর্গানাইজেশন ও মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর মাধ্যমে খুব সহজে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো যাবে বিকাশ ব্যবহার করে।
ওয়াইজ – Wise:
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান, ওয়াইজ হলো বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা আনার অন্যতম জনপ্রিয় সার্ভিস। ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ২০ মিলিয়নের অধিক গ্রাহককে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে কম রেটে যেকোনো লোকাল ব্যাংক থেকে ওয়াইজ ব্যবহার করে মানি ট্রান্সফার করা যায়। শুরুতে এই সেবাটির নাম ছিল “ট্রান্সফারওয়াইজ”, যা পরে নাম বদলে “ওয়াইজ” হিসেবে পরিচিত হয়।
ওয়াইজ ব্যবহার করে ৭০টির অধিক দেশ হতে বাংলাদেশে সরকার অনুমোদিত উপায়ে টাকা পাঠানো যায়। লোকাল এজেন্ট হিসেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও বিকাশ ব্যবহার করে ওয়াইজ। এছাড়াও ওয়াইজ ব্যবহার করে পাঠানো রেমিট্যান্স এর ক্ষেত্রে ২.৫% প্রণোদনা প্রদান করছে বাংলাদেশ সরকার।
ওয়াইজ ব্যবহার করে ইউরোপ, আমেরিকা, আরব-আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা আনা যাবে। খুব সহজে ওয়াইজ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেই সকল কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব। প্রবাসী বাংলাদেশীগণ তাদের পাসপোর্ট ব্যবহার করে ওয়াইজ একাউন্ট খুলতে পারবেন। ওয়াইজ একাউন্ট খুলতে মোবাইল নাম্বার, জন্ম, তারিখ, ইমেইল, ইত্যাদি ব্যাক্তিগত তথ্য চাওয়া হয়।
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন – Western Union:
বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা আনার অন্যতম জনপ্রিয় একটি সার্ভিস হলো ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এর অ্যাপ ব্যবহার করে বেশ সহজে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো যাবে। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ব্যবহার করে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম বেশ সহজ।
যে দেশ থেকে পাঠানো হবে উক্ত দেশের মুদ্রাকে টাকায় রুপান্তর করতে হবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করা যাবে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ব্যবহার করে। যার কাছে টাকা পাঠানো হয়েছে তিনি যথাযথ তথ্য প্রদান করে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন প্রদত্ত লোকেশন থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।
রেমিটলি – Remitly:
রেমিটলি হলো একটি ডিজিটাল রেমিট্যান্স সার্ভিস, যা রেমিট্যান্স পাঠানোর জটিল প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। কোনো ফিজিক্যল লোকেশন থেকে চালিত না হওয়ায় রেমিটলি এর খরচ বেশ কম, যার সুফল ভোগ করেন ব্যবহাররীগণ। অসধারণ এক্সচেঞ্জ রেট ও কম ফি এর মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার এর প্রতিশ্রুতি প্রদান করে রেমিটলি।
এক্সপ্রেস ও ইকোনমি নামে দুই উপায়ে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো যাবে রেমিটলি ব্যবহার করে। এক্সপ্রেস ব্যবহার করে টাকা পাঠালে দ্রুত পৌছায়, অন্যদিকে ইকোনমি এর ক্ষেত্রে কম ট্রান্সফার ফি প্রযোজ্য হয়। উভয় ক্ষেত্রেই খুব কম সময়ের মধ্যে রেমিট্যান্স পাঠাতে বদ্ধ পরিকর রেমিটলি৷
সোনালী ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক সহ বেশ কিছু বাংলাদেশি ব্যাংক রেমিটলি এর পার্টনার। ফ্রি রেমিটলি একাউন্ট তৈরী করে অর্থ রিসিভার এর নাম ও ঠিকানা এবং পেমেন্ট এর প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে মানি ট্রান্সফার প্রসেস করা যাবে। আবার পাঠানো অর্থের ট্রান্সফার আপডেট জানতে পারবেন টেক্সট ও ইমেইল এর মাধ্যমে।
স্ক্রিল – Skrill:
বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের আস্থার নাম স্ক্রিল। কেনো বলছি এই কথা? কারণ বাংলাদেশে পেপাল না থাকার কারণে ফ্রিল্যান্সারদের পেমেন্ট নিয়ে যে ভোগান্তি, তা অনেকাংশে দূর করতে সক্ষম হয়েছে স্ক্রিল। এছাড়াও সর্বোচ্চ রিসিভ এমাউন্ট এর দাবিদার ও কিন্তু স্ক্রিল। মোট কথায় যে কোনো ধরনের মানি ট্রান্সফার এর ক্ষেত্রে স্ক্রিল একটি লাভজনক মাধ্যম।
মানিগ্রাম – MoneyGram:
মানিগ্রাম এর নাম হয়ত কমবেশি সবাই শুনে থাকবেন। বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে মানিগ্রাম একটি পরিচিত নাম। মানিগ্রাম ব্যবহার করে বিদেশ থেকে বেশ সহজে বাংলাদেশে টাকা আনা যাবে। বিশ্বব্যাপী সাড়ে তিন লক্ষেরও অধিক মানিগ্রাম এজেন্ট এর সহায়তায় মানিগ্রাম ব্যবহার করে টাকা পাঠানো যাবে অন্যদেশ থেকে বাংলাদেশে।
মানিগ্রাম ব্যবহার করে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে মানিগ্রাম এজেন্টের কাছে যেতে হবে যথাযথ আইডি ও অর্থ নিয়ে। ব্যাংক কিংবা মোবাইল ওয়ালেটে মানিগ্রাম ব্যবহার করে টাকা ট্রান্সফার করা যাবে। ব্যাংকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে রিসিভার এর ব্যাংকের নাম ও একাউন্ট নাম্বার প্রয়োজন হবে। টাকা ট্রান্সফার সম্পন্ন হলে ব্যাংক বা মোবাইল ওয়ালেটে অর্থ জমা হয়ে যাবে।
জুম – Xoom:
বাংলাদেশে পেপাল এর সেবা না থাকলেও পেপাল চালিত ইন্টারন্যাশনাল মানি ট্রান্সফার সার্ভিস, জুম রয়েছে। “পাওয়ার্ড বাই পেপাল” হওয়ার কারণে জুম কে বেশ নিরাপদ একটি মানি ট্রান্সফার সার্ভিস বলা চলে। আবার খুব কম সময়ের মধ্যে Xoom ব্যবহার করে পাঠানো অর্থ পৌঁছে যায় গ্রহীতার নিকট। টাকা ট্রান্সফারের আপডেট ও পেয়ে যান ব্যবহারকারী। তবে অন্যান্য মানি ট্রান্সফার সার্ভিস এর চেয়ে জুম এর ফি কিছুটা বেশি।
এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা