‘শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধীতাকারী ব্যাক্তিদের কঠোর হুশিয়ারি নওফেলের

115
শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল
শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ বিরোধিতাকারী ধর্মীয় সংগঠনটির নেতাদের উদ্দেশ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘যতটুকু বলেছেন ক্ষমা চেয়ে সাবধান হয়ে যান, নয়তো ঘাড় মটকে দিতে বেশি সময় লাগবে না।’

শনিবার (১৪ নভেম্বর) শ্যামাপূজা উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীর গোলপাহাড় মহাশ্মশান পরিচালনা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমন্ত্রী নওফল এসব কথা বলেন।

এর আগে, শুক্রবার রাজধানীর ধূপখোলা মাঠে তৌহিদি জনতা ঐক্য পরিষদের এক সমাবেশ থেকে ধোলাইপাড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শীর্ষ নেতারা।

 

বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘দেখলাম, একটি খুব ছোট মৌলবাদি দলের নেতা দাঁড়িয়ে মঞ্চ কাঁপাচ্ছিলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয়েও কথা বলছিলেন। মঞ্চ কাঁপিয়ে, ভয়-ডর সৃষ্টি করে বড় গলায় যারা কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই- মঞ্চ বেঁশি কাঁপাবেন না। মঞ্চ বেশি কাঁপালে পায়ের নিচের মাটিও নরম হয়ে যাবে। আপনাদের হুমকিধমকি বন্ধ করুন। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করে। আপনারা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আছেন। মৌলবাদি গোষ্ঠীও গণতান্ত্রিক পরিবেশে রাজনীতি করার অধিকার মাঝে মাঝে রাখে। কিন্তু মৌলবাদি কথা বলা, জনমনে শঙ্কা তৈরি করা, জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং জাতির পিতাকে নিয়ে কথা বলার ধৃষ্ঠতা যারা দেখাবে, তাদেরকে আমরা বলতে চাই- আপনারা বাড়াবাড়ি বন্ধ করুন। আওয়ামী লীগের কাছে, এদেশের মানুষের কাছে দ্বীনে ইসলাম সুরক্ষিত আছে। আপনাদের কাউকে সেই ঠিকাদারি দেওয়া হয়নি।’

তরুণ আওয়ামী লীগ সাংসদ নওফেল বলেন, ‘হুঁশিয়ার করে দিতে চাই- মাঠ কাঁপিয়ে, মঞ্চ কাঁপিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাবে। মৌলবাদি গোষ্ঠীর উদ্দেশে বলতে চাই- আপনারা সাবধান হয়ে যান, বাড়াবাড়ি বেশি করে ফেলেছেন। আপনাদের বাড়াবাড়ি দেখছি আর শুনছি। সরকার এবং রাষ্ট্রের ঊর্দ্ধে কেউ নয়। এই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘাড়ে হাত রেখে বন্ধুত্বও করতে জানে, ঘাড়ে হাত রেখে ঘাড় মটকে দিতেও জানে। সুতরাং ঘাড়ে হাত দিয়ে বন্ধুত্ব করেছি বলে, সহনশীল আচরণ দেখিয়েছি বলে মনে করবেন না সেটা দুর্বলতা। দেশে হানাহানি করলে, আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করলে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করলে ঘাড় আমরা মটকে দেব। সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান, মৌলবাদের জায়গা এই বাংলাদেশ নয়।’

একই গোষ্ঠীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আইনত রাজনৈতিক দল করেছেন, রাজনৈতিক কথা বলুন। কাউকে কোনো ঠিকাদারি দেওয়া হয়নি দ্বীনে ইসলাম রক্ষার। সেটার দায়িত্ব মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন সবাইকে দিয়েছেন। সুতরাং আপনারা মঞ্চ কাঁপিয়ে জাতির পিতার নামে যে কথা বলছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী যেসব কথাবার্তা বলছেন, তাদের আমরা শেষবারের মতো বলতে চাই, সহনশীল আচরণকে-গণতান্ত্রিক আচরণকে দুর্বলতা ভাববেন না। আমাদের শক্তি মাটির অনেক গভীরে। এই বাংলাদেশের সংবিধান আমাদের শক্তিশালী করেছে। মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রত্যেককে শক্তিশালী করেছে। মঞ্চ কাঁপিয়ে বেশি কথা বলা এই বাংলাদেশে আমরা সহ্য করব না। যেখানে আছেন, যতটুকু বলেছেন, ক্ষমা চেয়ে সাবধান হয়ে যান, নয়ত ঘাড় মটকে দিতে বেশি সময় লাগবে না।’

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে নৈারজ্য সৃষ্টিকারীদের সতর্ক করে দিয়ে নওফেল বলেন, ‘এই দেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া যেমন আমরা কেউ সহ্য করব না, তেমনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নাম করে মানুষকে হেনস্থা করাও সহ্য করব না। দেশে আইন আছে, আদালত আছে- সরকার আছে, সেখানে না গিয়ে যারা নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে আমাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভীতি ও শঙ্কার পরিবেশ আনার চেষ্টা করছে, তাদের আমরা সাবধান হয়ে যেতে বলছি। মুষ্টিমেয় মৌলবাদি গোষ্ঠীর কাছে আমরা মাথানত করব না।’

‘এই বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক। বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলমান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান- অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে। এই বাংলাদেশে সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান শুধু নয়, প্রত্যেকে তার উৎসব সুন্দরভাবে পালন করবেন নিরাপদ পরিবেশে। আমরাও নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সেই উৎসবে অংশগ্রহণ করব। উৎসবে অংশ নেওয়া আর উপাসনায় অংশ নেওয়া এক কথা নয়।’ বলেন নওফেল

সকল ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভয় পাবার কিছু নেই। নির্ভয়ে থাকুন। কারণ আমাদের নেতৃত্বে আছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। কোনো সংকটের কারণ নেই। আমরা দেখছি- কিছু ষড়যন্ত্রকারী, মুষ্টিমেয় গোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করে শঙ্কার পরিবেশ আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু যতদিন শেখ হাসিনার হাতে থাকবে বাংলাদেশ, ততদিন আমাদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই। এই বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী হবে, ঈদুল ফিতর হবে, ঈদুল আযহা হবে, শ্যামাপূজা হবে, স্বরস্বতী পূজা হবে, এই বাঙালির সকল পূজাপার্বণ- ঈদ-উৎসব নির্ভয়ে নিসঙ্কোচে, শান্তিপূর্ণভাবে হবে।’

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে নওফেল বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার আত্মবিশ্বাসের সাথে বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে, সকল ধর্মের মানুষের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সচেষ্ট আছে। আমরা সরকারে থাকি আর না থাকি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা আমাদের দলের দীর্ঘকালের রাজনৈতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আমাদের সকল নেতাকর্মী, আমরা সবসময় যে কোনো ধর্মের মানুষের পাশে থাকি। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সকল ধর্মীয় ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পাশে থাকতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কিংবা নির্যাতনের মতো পৈশাচিক ঘটনার প্রতিবাদ আমরা অতীতেও করেছি। ভবিষ্যতেও করে যাব।’

গোলপাহাড় মহাশ্মশান কালীবাড়িতে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী। এসময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের সাবেক কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক স্বদেশ চক্রবর্তী, মহাশ্মশান পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাইকেল দে ও সাধারণ সম্পাদক কাজল কান্তি দেব এবং সনাতন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশ্বনাথ দাশ বিশু, সুচিত্রা গুহ টুম্পা, কাউন্সিলর প্রার্থী পুলক খাস্তগীর, রুমকি সেন গুপ্ত, আঞ্জুমান আরা আঞ্জু।

শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের সাংসদ উপমন্ত্রী নওফেল তার নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখেন এবং দর্শনার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই