নুবার গল্প

 

ফারহীন জাহান নুবা। সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এক পরিচিত মুখ। একাধারে অভিনেত্রী, বাচিকশিল্পী, লেখিকা, উপস্থাপিকা, সংবাদ পাঠিকা এবং উদ্যোক্তা।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নুবার পরিবারের সবাই-ই সংস্কৃতির বেশকয়েকটি শাখার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। এমনকি “নুবা” নামটিও”নাট্যালোক সিলেট” পরিবারের দেয়া।

বাবা নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক  বাবুল আহমদের হাত ধরেই একদম ছোটবেলায় এই বর্ণিল অঙ্গনে প্রবেশ করে নুবা।

বয়স যখন সবে পাঁচ তখনই বাংলাদেশ বেতারের “কিশলয়” অনুষ্ঠান থেকেই শিশুশিল্পী হিসেবে ছড়া-কবিতা আবৃত্তির শুরু। ছন্দের প্রতি তার ভালোবাসা এতোটাই গভীর ছিলো যে ক্লাস থ্রি থেকেই তিনি ছড়া লেখা শুরু করেন,ধীরে ধীরে কবিতার মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে  পড়েন।এখনো তার বাচনভঙ্গিমায় মুগ্ধ হন শ্রোতারা। বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত এই বাচিকশিল্পী বর্তমানে এখানেই ঘোষিকা, সংবাদপাঠিকা,নাট্যশিল্পী ও রেডিও জকি হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ২০২০ সাল থেকে অনলাইন ভিত্তিক  বেসরকারি রেডিও স্টেশন “রেডিও সিলনেট” এর উপস্থাপক হিসেবে আছেন। এরই মধ্যে এই স্টেশনে তার অনুষ্টান “দন্ত্য-ন মধ্যাহ্ন” খুব জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে।

নুবার গল্প শুনা যাক তার মুখেই

“যেহেতু আমার বাবা-মা দুইজনই ই মঞ্চে অভিনয়  করেন,বোনেরাও মঞ্চের সাথে জড়িত তাই  মঞ্চনাটকের প্রতি ঝোঁক ছোটবেলা থেকেই ছিলো।অভিনয়ের শুরুটা বেতারেই তখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি। নাটকের নাম ছিল ” গোখরা সাপ” সেখানে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় জগতে পদার্পণ। মঞ্চে ছোটবেলা থেকেই আসা যাওয়া ও থিয়েটার নাট্যালোক সিলেটের নাট্যকর্মী হিসেবেই নিজের আত্মপ্রকাশ করা। ২০১৭ সালে নাট্যালোক সিলেটের প্রযোজনায় নাটক “মুল্লুক” এর মধ্য  দিয়ে প্রথম মঞ্চনাটকে প্রবেশ, ২০১৯ এ “কালচক্র”নাটকে কাজ করি। এ বছর রবীন্দ্রনাথ এর শেষের কবিতা নাটকের কাজ শুরু করা হয়েছে। যেখানে আমি লাবণ্যের চরিত্রে অভিনয় করছি। কাজটা আপাতত কোভিডের জন্য থেমে আছে। সব অনুকূলে হলে শিগগিরই মঞ্চস্থ হবে”।

সিলেটের মঈনুদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের ইংরেজী সাহিত্যে অধ্যয়নরত নুবা একজন প্রতিভাবান লেখিকাও বটে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা ছোট ছোট লেখনীর জাদুতে মন ছুঁয়ে যায় পাঠকের;তারা অগণিত ভালোবাসা ছুঁড়ে দেন,অনুপ্রেরণা যোগান সবসময়ই।

এটা জেনে যে কেউ অবাক হবে যে এতোকিছুর ভিড়ে নুবা একজন সৃজনশীল সফল উদ্যোক্তাও।নুবা ও তার বড় দু’বোনই হাতের কাজে বেশ দক্ষ। নিজেরদের ডিজাইন করা শাড়ি, কুর্তি,কামিজ, ব্যাগ,কানের দুল, আংটি,প্যান্ডেন্ট সহ অনেক কিছু নিয়েই ২০১৬ সালে গড়ে তুলেন অনলাইন শপ” নওলী”। পাঁচ বছরের সাফল্যমন্ডিত যাত্রায় নওলী সিলেটের গন্ডি পেরিয়ে বিস্তৃত হয়েছে পুরো বাংলাদেশে।

অলরাউন্ডার নুবার আরেকটি গুণ হলো তিনি একজন মেকাপ আর্টিস্ট।মা অভিনেত্রী,নাট্যজন ও সফল ব্যবসায়ী নুরজাহান জেসমিনের “তিনকন্যা বিউটিপার্লার” এর সুবাধে নুবা শিখে যান মেকাপের আদ্যপ্রান্তও!

বহুগুণে গুনান্বিত নুবার কাছে জীবনের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে হেসে বলেন, আসলে সংস্কৃতি চর্চা ছাড়া আমি নুবা কিছুই নই। মনের তৃপ্তি ও আত্মার শান্তির জন্য আমি এই পথের পথিক হয়েছি। এসব কাজের মাধ্যমেই আমি “আমার আমিকে” প্রকাশ করতে ভালোবাসি। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব,পাঠক-শ্রোতার কাছ থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণা আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।জীবনে এখনো অনেক কিছু করার বাকি। তবে আমি বড় বড় চাকরির মোহে আচ্ছন্ন নই, আমার প্যাশনের জায়গায় যদি প্রফেশন হয়ে যায় তাতে বরং আমি বেশি খুশি হবো”