
চবি প্রতিনিধিঃ
“ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ুক সকল প্রাণে”- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত এক্সট্রা কারিকুলাম ভিত্তিক সংগঠন “Chittagong University Human Resource Club”
গত ১৬ই জানুয়ারি একটি সমাজ কল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে। সংগঠনের গ্রীন এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস উইং এর তত্ত্বাবধানে এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিমের পরিচালনায়, “আলোর ফাঁড়ি” শিরোনামে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৬০০ পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে প্রয়োজনীয় বস্ত্র ও শুকনো খাদ্যদ্রব্য।
করোনায় মহামারী, রোগশোক এবং আর্থিক বিপর্যয় সমাজের নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষদের এক অভাবনীয় দুর্যোগের দিকে ঠেলে দিয়েছে। যার দরুণ এ বছরের শীতের গ্রাস থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখা তাদের জন্য এক মহা দূর্বিষহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। “ভালোবাসার এই উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ুক সকল প্রাণে” – এই শ্লোগানের সাথে সকল ছাত্রছাত্রী কণ্ঠ মিলিয়ে ১৩ জানুয়ারি থেকে সাহায্য সংগ্রহ এবং একত্রীকরণ শুরু করেন। প্রজেক্টের অংশ হিসেবে, বেশকিছু আলোচনা এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পরে, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এইচ আর এম (HRM) ডিপার্টমেন্টের অধিকাংশ শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর স্টেশনে সিইউ এইচ আর ক্লাবের বুথে সাহায্য জমাদান করতে থাকেন। প্রায় ৬০০ পরিবারের জন্য CUHRC বস্ত্র সংগ্রহ করেছেন এবং ব্যবস্থা করেছেন চাল, ডাল, আটা, লবণ, পেঁয়াজের মত বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় শুকনো খাদ্য সামগ্রী এবং এর সাথে রাতে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এসকল বস্ত্র সংগ্রহের পরে বাছাইকরণ এবং প্যাকেটজাত করেন ক্লাবেরই সম্মানিত সদস্যবৃন্দ।
শীতবস্ত্র ও শুকনা খাবার বিতরণের পাশাপাশি সিইউ এইচ আর ক্লাব হাটহাজারী সংলগ্ন “শাহ মুনিরিয়া মঈনিয়া এতিমখানা ও হেফজখানা”-র বাচ্চাদের খাবার পৌঁছে দিয়েছে এবং নগদ অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে এক বিশালসংখ্যক অভাবী মানুষদের জন্য সাহায্য দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন ক্লাবটির তরুণ ছাত্রদল। ১৬ই জানুয়ারি, রোজ শনিবার, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি গ্রহণ করে এবং সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্লাবের একদল প্রানবন্ত সদস্য চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে অভাবগ্রস্ত এলাকায় সাহায্য নিয়ে যান।
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ছাত্রছাত্রী এবং ক্লাবের সক্রিয় সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত কর্মকাণ্ডকে প্রশংসিত করে ও তাদের স্পৃহাকে আরো উজ্জীবিত করতে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর ও সিইউ এইচ আর ক্লাবের সম্মানিত মডারেটর ড. মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, “সিইউ এইচ আর ক্লাব কর্তৃক গৃহীত “আলোর ফাঁড়ি” নিঃসন্দেহেই একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ, যা হাসি ফুটাতে পেরেছে চট্টগ্রামের বেশ কিছু মানুষের মুখে। সিইউ এইচ আর ক্লাব অতীতেও মানবতার সেবায় কাজ করেছে। বর্তমানে ছাত্রদের মধ্যে মানবিকতার বিষয়টি সৃষ্টি করা অত্যন্ত দরকার। আর এই লক্ষ্যেই সিইউ এইচ আর ক্লাব দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করার তাগিদ থেকেই এই ধরণের সমাজকল্যাণ মূলক কাজ হাতে নিয়েছে এবং এই ধারা সামনেও অব্যাহত থাকবে।”
ক্লাবের সম্মানিত প্রেসিডেন্ট নিজাম উদ্দীন খান এরূপ সকল প্রজেক্টের উদ্যোগ নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন কিছু অসাধারণ কথার মাধ্যমে, “প্রতিবছরের মতো এবার সিইউ এইচ আর ক্লাবের (CUHRC) সামাজিক উদ্যোগ ‘আলোর ফাঁড়ি’। অভাব-অনটনে জর্জরিত কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল আমাদের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি আমাদের ক্লাবের সদস্যদের সংগ্রহ করা সাহায্য অভাবগ্রস্থ মানুষগুলোর কাছে যথাযথ ভাবে পৌঁছে দেয়ার। আমার বিশ্বাস আমরা ভবিষ্যতেও এমন মহৎ কার্যক্রম চালিয়ে যাব এবং শিক্ষার পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক কাজে ভূমিকা রাখতে পারব।”
সিইউ এইচ আর ক্লাবের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সম্মানিত ভাইস প্রেসিডেন্ট তাহমিদ শাহরিয়ার দিপু এই পুরো প্রজেক্টের উদ্দেশ্য কি ছিলো তা তুলে ধরেন, “উদ্দেশ্য ছিলো মানবতার খাতিরে কিছু করা সাথে কিছু হত দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। সারারাত শহরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আমরা ত্রাণ বিতরণ করেছি আর চেষ্টা করেছি যাতে আমাদের ত্রাণ এর যথার্থ বণ্টন হয়। সাথে চেষ্টা ছিল ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করার যেন পড়ালেখার পাশাপাশি এভাবেই মানবতার সেবায় এগিয়ে আসে।”
সর্বোপরি, প্রজেক্টের প্রতিপাদ্য বাক্যের প্রতিফলন যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ফুটে ওঠে – এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের। ভালোবাসার উষ্ণতা ফুটিয়ে তুলুক হাসি অসংখ্য মুখে।
এফএম/বাংলাবার্তা