মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ: চট্টলার মাটি ও মানুষের অবিসংবাদিত নেতা চট্টলবীর খ্যাত আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে নগর আওয়ামী লীগ ও তার পরিবার।
মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরার সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে জন্ম নেন। পারিবারিক জীবনে তিনি দুই ছেলে ও চার কন্যা সন্তানের পিতা।
১৯৬২ সালে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে এইচএসসি এবং পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সফল মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গণমানুষের নেতা। চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের স্বার্থে তিনি কখনো এক চুলও ছাড় দেননি। চট্টগ্রামবাসীর বিপদ আঁচ করতে পারলেই তিনি ছুটে যেতেন সবার আগে। শারীরিকভাবে নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করলেও জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তার মনোবল ও সাহস ছিল অটুট।
চট্টলবীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করেন ছাত্রজীবনেই। তখন থেকে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে তিনি নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর আর থেমে থাকেননি এক মুহূর্তের জন্যও। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় দিনে নুর আহাম্মদ সড়কের নেভাল অ্যাভিনিউ মোড়ে লড়াই করতে গিয়ে গ্রেফতার হন। এরপর ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে গিরিসংকূল পাহাড়ি এলাকা দিয়ে সদলবলে ঢুকেন দেশে। প্রাণপণ লড়াই করেন দেশমাতৃকার জন্য। মুক্তিযুদ্ধের পর শ্রমিক লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যা করা হলে তখনই তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে ভারতে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ফিরে এসে চট্টগ্রামকে ‘সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন’ করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে এসে হারান ঘনিষ্ঠ বন্ধু মৌলভী সৈয়দকে। পরবর্তী দীর্ঘ সামরিক শাসনের সময় মহিউদ্দিনকে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়েছিল।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলনসহ চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলনে বের হতেন সবার আগে। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। টানা ১৭ বছর এ সংস্থাকে সফলভাবে পরিচালনা করে নগরবাসীকে একটি আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে সক্ষম হন তিনি।
এমএ/এমএইচ/বাংলাবার্তা