আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন ইউআইটিএস’র উপাচার্যের কাছে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা বঙ্গলীগ সভাপতি

195
শওকত হাসান মিয়া
শওকত হাসান মিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাজধানীর ভাটারায় অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস)-এর উপাচার্যকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ৬০ কোটি ঢাকা চাঁদা দাবির মামলায় আদালতকে এক হাত দেখিয়েছেন ‘বাংলাদেশ জাতীয় বঙ্গলীগ’র প্রেসিডেন্ট শওকত হাসান মিয়া।

চাঁদাবাজীর ওই মামলায় ভুয়া ও জাল মেডিক্যাল সনদ দেখিয়ে গত ১২ আগস্ট জামিন পান তিনি।

ঘটনা জানাজানি হলে গত ২৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম কোর্টের মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শাহিনুর রহমান আসামি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ২৭ আগস্ট (গতকাল বৃহষ্পতিবার) সকাল ১০টায় আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হাজির হননি শওকত। উল্টো গতকাল দুপুরে তার আনজীবীরা আদালতের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আদালত সূত্র জানায়, গতকাল এজলাসে হাকিমের উপস্থিতি শুনানি চলাকালে শওকতের আইনজীবীরা ঢুকে পড়েন বিচারকের খাসকামরায়। এতে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।আসামির আইনজীবীদের অসদাচরণ ও অবৈধ হস্তক্ষেপের কারণে শুনানির আদেশ দিতে বিব্রতবোধ করেন আদালত। বিষয়টি গড়িয়েছে ঢাকার সিএমএম জুলফিকার হায়াত-এর দপ্তর পর্যন্তও। বাদী পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে খাসকামরায় অনাকাঙ্খিত ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও আসামির জামিন বাতিলের আবেদনের অধিকতর শুনানীর সত্তর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

ইউআইটিএস’র পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া আমাদের সময়কে বলেন, ইউআইটিএস’র উপাচার্যকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ৬০ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে
চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা থানায় শওকত হাসান মিয়াসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয় (নম্বর-২ (১) ২০)। মামলাটি দায়ের করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্যের
ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল। ওই মামলায় গত ৮ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান শওকত হাসান। আদালত তাকে ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়েছিলেন।

কিন্তু জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিম্নআদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। পাঁচ মাস পর গত ২৭ জুলাই ঢাকার সিএমএম আদালতে শওকত হাসান মিয়া
গুরুতর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আত্মসমর্পণপূর্বক জামিনের আবেদন করেন। অসুস্থতার সমর্থনে কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে না পারায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহ জামিন
নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।

গত ১২ আগস্ট শওকত হাসানের আইনজীবীর মাধ্যমে ঢাকার পশ্চিম রামপুরার ডেলটা স্পেশালাইজড হসপিটালের প্যাডে দেওয়া একাধিক ‘চিকিৎসা সনদ’ ব্যবহার করে আদালতে জামিন
আবেদন করেন। এ জামিন আবেদন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিষ্টার মাসুমুর রহমান মজুমদার ও এম.এম. গাফফার চোধুরী ইমন। প্রাপ্তনথি পর্যালোচনা করে ঢাকার মেট্রোপলিটন
ম্যাজিস্ট্রেট শারাফুজ্জামান আনসারীর আদালত সে দিনই শওকত মিয়াকে জামিন দেন। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, আদালতকে যে চিকিৎসা সনদপত্র দেখিয়ে শওকত মিয়া জামিন নিয়েছেন
তার পুরোটাই ছিলো জাল ও ভুয়া। বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকও (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ) তদন্ত সাপেক্ষে ১৮ আগস্ট লিখিতভাবে জানান, আসামী শওকত হাসান মিয়ার
পক্ষে আদালতে দাখিলকৃত ম্যাডিক্যাল সার্টিফিকেটটি জাল। পরে ঢাকার সিএমএম আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট সারাফুজ্জামান আনছারী কর্তৃক আসামীর অনুকূলে ১২ আগস্ট প্রদত্ত
শওকত হাসান মিয়ার জামিন আদেশটি বাতিল ও জামিন সংশ্লিষ্ট জাল জালিয়াতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জন্য গত ২০ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের কাছে
আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৩ আগস্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শাহিনুর রহমান আসামীর জামিন কেন বাতিল হবে না এবং আসামীর উপস্থিতি নিশ্চিতকল্পে কারণ দর্শানোর
নোটিশ প্রদান করেন। পাশাপাশি লিখিত বক্তব্যসহ আসামীর উপস্থিতি সাপেক্ষে ২৭ আগস্ট (গতকাল) সকাল ১০টায় আদালত উপস্থিত থাকার জন্য আসামীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট
এমএ গাফফার চৌধুরীকে নির্দেশ দেন। একই দিন একই সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকেও হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন আদালত।

অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া আরও বলেন, বৃহষ্পতিবার সকালে সিএমএম কোর্টের মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শাহিনুর রহমানের আদালতে বাদী পক্ষের আইনজীবী ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক জনাব নজিবুল্লাহ হিরু ও গাজী শাহ্ আলম-এর নেতৃত্বে প্রায় দুই শতাধিক আইনজীবী আসামীর জামিন বাতিলের আবেদনের উপর শুনানী করেন।

আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার শুনানী গ্রহন করেন। কিন্তু আসামী শওকত হাসান মিয়াকে ছাড়াই তার আইনজীবী শুনানীতে অংশ নেন। আদালত উভয় পক্ষের শুনানী শেষে পরে আদেশ দিবেন মর্মে উভয় পক্ষকে জানান। বিচারকের এজলাসে বাদী পক্ষের আইনজীবীগন আদেশের আপেক্ষায় ছিলেন।

এ সময় আসামীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিষ্টার মাসুমুর রহমান মজুমদার ও এমএ গাফফার চৌধুরী ইমন বিচারকের খাস কামরায় অবস্থান করেছেন বলে আদালত জানতে পারেন।

এই পরিস্থিতিতে আদালত বাদীপক্ষের ঢাকা বারের সিনিয়র আইনজীবীগনসহ অন্যান্য আইনজীবীর সামনেই খাসকামরা থেকে আদালতের সম্মুখে হাজির হওয়ার জন্য আসামীর দুই আইনজীবীকে ডেকে পাঠান। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আসামী পক্ষের আইনজীবীরা বিচারকের খাস কামরা থেকে আদালতের সামনে আসেন এবং মাথা নিচু করে বেরিয়ে যান।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাকিম এই মামলার আদেশ প্রদানে বিব্রতবোধ করেন এবং বাদীপক্ষের আইনজীবীগনকে এই বিষয়ে প্রতিকারের জন্য সিএমএম-এর কাছে স্বাক্ষাত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।