আবদুর রহমান রাফি:
যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আযহা পালিত হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী এ বছর আগস্ট মাসের ১ তারিখ বাংলাদেশের মানুষ ঈদুল আযহা উদযাপন করবেন। ঈদুল আযহার অন্যতম একটি আনুষ্ঠানিকতা হলো পছন্দের পশুকে কোরবানি করা। এমন পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া,দুম্বা ইত্যাদি। এগুলোকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আনআম’। বাংলাদেশে কোরবানির জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় পশু হলো গরু। সামর্থ্যবানরা কোরবানির পশু (গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, উট ইত্যাদি) কেনার কথা ভাবছেন নিশ্চয়ই। সবার মনে একটা বিষয়ই উঁকিঝুঁকি মারে, সূস্থ্য – সবল পশু কিভাবে চিনবো? বর্তমানে অনেকেই স্টেরয়েড ব্যবহার করে কোরবানীর পশুকে অসদুপায়ে মোটাতাজা করে বিক্রি করে। এতে প্রতারিত হন ক্রেতারা। ক্রেতারা যাতে প্রতারণার শিকার না হয় সেজন্য বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কিছু বৈশিষ্ট্যের দিকে নজর দিলে সহজেই চেনা যাবে সূস্থ্য-সবল কোরবানীর পশু। যেমন –
>> পশুর চোখ উজ্জ্বল ও তুলনামূলক বড় আকৃতির হবে।
>> অবসরে জাবর কাটবে (পান চিবানোর মত)।
>> কান নাড়াবে, লেজ দিয়ে মাছি তাড়াবে।
>>বিরক্ত করলে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সহজেই রেগে যাবে।
>>গোবর স্বাভাবিক থাকবে, পাতলা পায়খানার মতো হবে না।
>>দেখতে প্রাণবন্ত, চামড়া ঝকঝকে দেখাবে।
>> নাকের উপরটা ভেজা ভেজা মনে হবে, সামনে খাবার এগিয়ে ধরলে জিহ্বা দিয়ে তাড়াতাড়ি টেনে নিতে চাইবে। অপরদিকে অসূস্থ্য পশু ভালোমতো খেতে চাইবে না।
দূর -দূরান্ত থেকে যানবাহনের মাধ্যমে বা হাঁটিয়ে পশু বিক্রি করতে নিয়ে আসা হয়। এই দীর্ঘ যাত্রার কারণে পশুকে বেশ ধকল সহ্য করতে হয়। পশু বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই অনেক সময় শুয়ে পরে এবং সহজে উঠতে চায় না। তার মানে এই নয় যে প্রাণীটা খুবই অসূস্থ্য। এ সময় পশুকে বিরক্ত না করে পর্যাপ্ত (প্রায় ৮-১০ ঘন্টা) বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া উচিত এবং তার খাবারের সুব্যবস্থা করতে হবে। সামনে ঘাস জাতীয় খাবার ও পানি রাখা যেতে পারে, প্রয়োজনে সে গ্রহণ করবে। পাশাপাশি পানির সাথে স্যালাইনও মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। যেসব পশুকে স্টেরয়েড বা মোটাতাজাকরণের ঔষধ প্রয়োগ করে বিক্রি করা হয়, সেগুলোর শরীরে পানি জমে ফুলে ওঠে। পানির প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে। লেজ দিয়ে মাছিও খুব একটা তাড়াতে দেখা যায় না। খাবারও তুলনামূলকভাবে কম খায়। আঙ্গুল দিয়ে শরীরের মাংসালো অংশে চাপ দিলে আঙ্গুল পশুর শরীরে দেবে যাবে এবং সহজের পর্যাপ্ত পানির উপস্থিতি টের পাওয়া যাবে।
কোরবানির জন্য দেশে গরু,মহিষ, ছাগল প্রভৃতি পশু বা প্রাণীর চাহিদা ব্যাপক। পূর্বে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও অনেক গশু আমদানি করা হত। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, কোরবানির চাহিদা মোতাবেক দেশে এখন পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু বা প্রাণী রয়েছে। পশু ক্রয় থেকে শুরু করে মাংস ভক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে সর্বক্ষেত্রে। রোগব্যাধির প্রকোপ বেশি হলে প্রাণী চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।
গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হল কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর হওয়া। শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের।
কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদিসে এসেছে :—
সাহাবি আল-বারা ইবনে আযেব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (স.)আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন : চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না—অন্ধ ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট,রোগাক্রান্ত ; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু ; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত ; যার কোন অঙ্গ ভেঙ্গে গেছে।
কোরবানির পশু কেনার পর আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই পশুর প্রতি বেশি দরদ দেখাতে গিয়ে জবাইয়ের পূর্বে বেশি করে খাবার খাওয়ায়, যা বিজ্ঞানসম্মত নয়। এতে করে মাংসের গুণগত মান কমে যেতে পারে৷ পশু জবাইয়ের ১২ ঘন্টা পূর্ব থেকে পশুকে কোনো খাবার না দেওয়াই ভালো এবং বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে৷ এতে করে চামড়া ছাড়ানো সহজ হবে৷
লেখক:
ইন্টার্ন ভেটেরিনারিয়ান,
এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা