চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদের ডুপ্লেক্স বাড়ি

739

সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলাবার্তা

মাহমুদুল করিম ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম কলেজ শাখার সভাপতি। এক বছরের জন্য কমিটি দেওয়া হলেও ৫ বছর হয়ে গেছে সে কমিটির। যার কারণে বেড়েছে স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধ বাণিজ্যের দাপট। শুধু তা-ই নয় ইতিমধ্যে নিজের জন্য তৈরি করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়িও।

এক সময়ের জামায়াত শিবিরের ঘাঁটি খ্যাত কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলায় জম্ম ছাত্রলীগের এ নেতার।

দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম কলেজ শাখার সভাপতি হওয়ার পর সফলভাবে সংগঠনটি পরিচালনা করলেও কিছু বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি। এমনকি দলীয় ফোরামে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এত টাকা এবং বিলাসী জীবনযাপনের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। এরপর ছাত্রলীগের নতুন কমিটির দাবিতে সোচ্ছার হয়ে উঠে একটি অংশ। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছেও আলোচিত হয়েছে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির বিত্তবৈভবের মালিক বনে যাওয়ার কাহিনী। বিশেষ করে ছাত্রলীগ সভাপতি হওয়ার মাত্র ২ বছরের মাথায় বিলাসবহুল বাড়ি তৈরির বিষয়টি নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। এর আগে তার এবং তার পরিবারের তেমন কোন টাকা পয়সা ছিল না বলে জানান এলাকাবাসী। কুতুবদিয়া উপজেলার সরকারি কলেজের পাশে মাহমুদুল করিমের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা খরচ করে নতুন এ বাড়ি তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। ৩ তলা ডুপ্লেক্স বাড়ি তুলেছেন মাহমুদুল করিমের পরিবার।

এলাকার একটি সূত্র জানিয়েছে, কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের সবচেয়ে অভিজাত বাড়িটির মালিক এখন মাহমুদুল করিম। ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পরই তিনি যেন আলাদীনের চেরাগ পেয়ে যান। ডুপ্লেক্স এই বাড়িটির পাশেই মাহমুদুল করিমের আগের টিনশেড বাড়িটি এখনো রয়েছে। নতুন বাড়িটি দেখতে এলাকার মানুষরা এখন ভিড়ও করছেন বলে নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।

মাহমুদুল করিমের পিতা মোহাম্মদ আবু তাহের। দিনমজুরের কাজ করতেন। অনেক কষ্টে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করিয়েছেন আবু তাহের।

নতুন অভিজাত বাড়ির বিষয়ে জানতে চেয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদুল করিমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এ প্রতিবেদক দুপুর ১ টা ১০ মিনিটে নিউজ সংক্রান্ত মন্তব্য চেয়ে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি তার জবাব দেননি।

২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মাহমুদুল করিমকে সভাপতি ও সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৫ সদস্যের কমিটি দেয় চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহম্মেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। কমিটি গঠন পরপরই শুরু হয় নানা সমালোচনা। বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবিও জানায় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ দিয়ে অযোগ্য ও নানা ইস্যুতে সমালোচিতদের দিয়ে কমিটি গঠন করায় সেদিনই কমিটিতে পদ পাওয়া ১৫ জন নেতা পদত্যাগ করেন।

এরপর থেকে সভাপতি মাহমুদুল করিম একনায়কতন্ত্র কায়েম করে কলেজ ক্যাম্পাসে। সভাপতি হয়েই কলেজের বিভিন্ন টেন্ডার থেকে আয় করেছেন অর্ধলাখ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন কোচিং সেন্টার থেকে মাসিক চাঁদা আদায়, চকবাজারের টেম্মু স্টেশন, ভ্রাম্যমান দোকান থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করে বনে যান অঢেল সম্পদের মালিক। কলেজের ফরম ফিলাপ, ভর্তি, শিক্ষক বদলি বাণিজ্য, সংস্কার কাজ, জামাত-শিবির সন্দেহে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আটক করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে এমন কোন কাজ করেননি তিনি। যেই এর প্রতিবাদ করেছে তাকেই গুনতে হয়েছে কড়া মাশুল। এমনকি নিজ দলের কর্মীকেও মারধরের ঘটনায় পিছ পা হননি এ সভাপতি।

ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার আগে তার পরিবার নিজের বসতভিটা ছাড়া কিছুই ছিল না। এখন বাড়ি ছাড়াও মাহিনদ্রা গাড়ি ৫ টা। জিপ গাড়ি রয়েছে ২ টি। এছাড়াও এলাকায় কম দামে কিনেছেন জমি।