”ধর্মনিরপেক্ষতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি”

202
ইস্রাফিল রনিঃ
ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা দেয়ার আগে আমি এ মতবাদের উৎপত্তি নিয়ে আলোকপাত করছি।আমরা জানি, মধ্যযুগে খ্রিষ্টান ধর্মগুরুদের অতিমাত্রায় বাড়াবাড়িতে মানুষ ধর্মের উপর বিষিয়ে উঠেছিল। তখন ফাদাররা মানুষেদের ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে শুরু করে সকল স্বাধীনতাই হরণ করেছিলো। যেমনঃ কোপার্নিকাসের” আকাশে গ্রহ নক্ষত্রের আবর্তন ” নামক বইটি বাজেয়াপ্ত করে। টেলিস্কোপ আবিষ্কার করার অপরাধে গ্যালিলিওর উপর চরম নির্যাতন। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলায় স্পিনোজার মৃত্যুদণ্ড। জন লকের উপর নির্যাতন, নির্বাসন ইত্যাদি।
 
এর পর আরম্ভ হয় ফরাসি বিপ্লব; আবির্ভাব হয় জ্যাঁ জ্যাক রুশো,মন্টেস্কু, কার্ল মার্কস।ছড়িয়ে পড়ে কান্ট,হেগেলের ভাববাদ,জনপ্রিয়তা লাভ করে মার্কসের বস্তুবাদ। মানুষ ধর্মকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে স্বাধীন জীবন যাপনের প্রয়াস পায়।তৈরী হয় ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ, ধর্মকে কেবল গীর্জায় আবদ্ধ করতে মানুষ সমর্থ হয়।
 
এবার আসি সংজ্ঞায়, বাংলা একাডেমির ইংলিশ – বাংলা ডিকশনারি ২০১২ সংস্করণে Secular শব্দের অর্থ-ইহজাগতিকতা,পার্থিব, জড়। Encyclopedia of Britanica তে বলা হয়েছে, যারা কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নয় এবং আধ্যাত্মিকতা,জবাবদিহিতা ও পবিত্রতা বিরোধী তাদেরই বলা হয় ধর্মনিরপেক্ষ।
Chambers dictionary এর মতে, ধর্মনিরপেক্ষতা হলো এমন এক বিশ্বাস যার মতে রাষ্ট্র,নৈতিক শিক্ষা সব ধর্মমুক্ত থাকবে।
 
এ নীতিকে বাংলাদেশ প্রাসপেক্টিভে ভুতুড়ে বলার কারণ, আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এই তথা কথিত নীতি ১৯৭২ সালে সংবিধানে প্রবেশ করার আগে কোনো রাজনৈতিক দাবী বা প্রস্তাবে নীতিটি ছিলো এমন কোনো নজির খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
যেমনঃ
১.১৯৬৯ সালে প্রস্তাবিত খসড়া সংবিধান সংশোধনী বিলে ইসলামি রিপাবলিক অব পাকিস্তান রাখার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সম্মতি জানিয়েছিল। ( শেখ মুজিবের শাসনকাল, পৃষ্ঠা ১৬৫, মওদুদ)
২.১৯৭০ এ আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মসূচিতে কুরআন সুন্নাহ বহির্ভূত কোনো আইন পাশ হবেনা বলে ঘোষণা করে।
 
৩. ছাত্র সমাজের ১১ দফায় এ নীতির গন্ধ পর্যন্ত ছিলোনা।
 
৪.আমরা সবাই শুনেছি ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশে ফিরেই বিশ্ববাসীকে ডেকে ডেকে বলে,” আমি মুসলমান”বাংলাদেশ ২য় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্র।
 
৫.আমরা এও জানি কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে মুক্তিযুদ্ধের ১ম বেসামরিক ঘোষণা শুরু হয়েছিলো ইসলামি রীতিতে ( নাহমাদুহু………… শেষে কুরান তেলাওয়াত)
 
৬. এ ছাড়াও কুরান,হাদিস, ইসলাম ও জিহাদের কথা বলে বলে সৈন্যদের উদ্দীপ্ত করা হতো।( প্রাগুপ্ত পৃষ্ঠা ৬১৯)
 
উপরে এতো গুলো কথা বলার একমাত্র কারণ হলো আমাদের দেশের জন্য এ নীতিটা ছিলো সম্পুর্ন নতুন অপরিচিত, অভিনব, ভুতুড়ে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা এ নীতি কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। যাইহোক আমাদের সংবিধান এ নীতি বিকৃত এবং কিছুটা পরিবর্তন করেছে, সেখানে সকল ধর্মের মানুষকে সমানাধিকার, কোনো ধর্মকে বিশেষ মর্যাদা না দেয়া, রাজনীতি ধর্মমুক্ত রাখার বিষয়গুলো বলা হয়েছে। এসব নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমি শুধু প্রমাণ করতে চেয়েছি, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা একটি ইসলামি রাষ্ট্র চেয়েছিলো।
 
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এফএম/বাংলাবার্তা