ফাহিম আহমেদ সাফায়েতঃ
শীতের সকালে গাছ থেকে নামানো হাঁড়ির রসের মিষ্টতা পরখ করতে কার না মনে চায়। গ্রাম অঞ্চলে কিশোরদের মাঝে রাতের অন্ধকারে হাঁড়ি চুরি করার প্রবনতা ব্যাপক। ভোর হলেই গ্রামের গাছিদের দেখা যায় কাদে ডজন খানেক হাঁড়ি নিয়ে দুলতে দুলতে যাচ্ছে গঞ্চের দিকে। তারপর এই রস যাবে শহরে। কারন খেজুরের রসের চাহিদা ব্যাপক। তবে এই রস পরিশোধন করা ছাড়াই ব্যবহার হচ্ছে।অথচ এই খেজুরের রসের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাসে সংক্রামিত হচ্ছে অনেকে। নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমিত বাদুড়ের লালা ও প্রসাব মিশ্রিত দুষিত রস পানের ফলে এই সংক্রমণের শিকার হতে হয়।শীতকালে খেজুরের রস বাদুড়ের প্রধান খাদ্য হয়ে থাকে। সংক্রমিত বাদুড় রস খাওয়ার সময় ভাইরাস ছড়ায় খেজুরের রসে। সেখান থেকে রস পানকারী ব্যক্তিতে তারপর আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে অন্যদের মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়ায়।
২০১৩ সাল পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাস সংক্রামণে ৫৮২ জন আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৪% মৃত্যু বরন করেছেন। এখন পর্যন্ত এই রোগের কোন টীকা আবিষ্কার হয়নি বলেই মৃত্যুর হার এত বেশি। এই সংক্রমণের তেমন কোনো লক্ষন প্রকাশিত হয়না। তবে জ্বর, কাশি,মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পেশিতে ব্যথা,বমি,মস্তিষ্কের সংক্রমণর ফলে স্নায়ুবিক সমস্যা হতে পারেন এবং২৪ -৪৮ ঘন্টার মধ্যে রোগী অচেতন হয়ে যেতে পারে। ১৯৯৯ সালে মালেশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রথম এই রোগটি দেখা যায়। তখন এই সংক্রমণটি ছড়ায় আক্রান্ত শুকরের মুখের লালা ও নিঃশ্বাসর মাধ্যমে। ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়ায় বাদুড়ের মাধ্যমে।১৯৯৯ সালে মালেশিয়ায় ১০৫ জনের মৃত্যু ও তিন শতাধিক মানুষর মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক সমস্যার কারন ছিল এই সংক্রমণটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) এর রিপোর্টে জানা যায় বাংলাদেশ প্রথম নিপাহ ভাইরাস ধরা পড়ে মেহেরপুরে ২০০১ সালে। সে বছর ১৩ জন আক্রান্ত হয়। তারপর নবাবগঞ্জ ২০০৩ সালে ১২ জন, রাজবাড়ীতে ২০০৪ সালের জানুয়ারীতে ৩১ জন একই বছর ফরিদপুরে ৩৬ জন,২০০৭ এ সারা দেশে ২৩ জন, ২০০৯ ও২০১০ সালে সারাদেশে১৯ জন আক্রান্ত হয়, ২০১১ সালে ৪৪ জন ও ২০১২ সালে ৪২ জন আক্রান্ত হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে ২০৯ জন আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে ১৬১ জন মাটা গেছেন””
WHO এর রিপোর্ট পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের ভিতরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। তাই এই সময়ে বেশি সচেতন হওয়া উচিত। ২০১৯ সালেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমেনি। বর্তমানে নিপাহভাইরাস সংক্রামণের কোন কার্যকরী চিকিৎসা নেই। সাধারণত সহায়ক চিকিৎসা দ্বারা রোগ উপশম করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। তারপরও মৃত্যুর হার কমছে না। যেহেতু এই রোগের তেমন কোনো প্রতিকার নেই। তাই প্রতিরোধ ই এক মাত্র প্রয়োজনয়ীয় ব্যবস্থাঃ
- বাদুড়ের লালা মিশ্রিত দুষিত রস পান না করা।
* বাদুরপূর্ন কূয়ার জল ব্যবহার না করা।
* আক্রান্ত রোগীকে আলাদা করে সেবা দেওয়া।
- আক্রান্ত রোগী সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা।
- আক্রান্ত রোগী ও চিকিৎসকর মাস্ক ব্যবহার করা