সৌরজগতে একসঙ্গে ৩ ঘটনা

সূর্য গ্রহণ
নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ রোববার তথা ২১ জুন ২০২০ সালের দীর্ঘতম দিন। কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে সূর্য এদিন পৃথিবীর কাছে চলে আসে। ফলে এদিন বছরের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে পৃথিবীকে আলো দেয় সূর্য। দিনটিকে কর্কটক্রান্তি দিবস হিসেবেও পালন করা হয়ে থাকে।
 
এমন দিনে আজ আরও দুটি ঘটনা যুক্ত হচ্ছে। একটি অমাবস্যা; পাশাপাশি সূর্যগ্রহণ হবে। বাংলাদেশ থেকে আংশিক দেখা যাবে সূর্যগ্রহণ। তবে উত্তর ভারত, পাকিস্তানের দক্ষিণ ভাগ, চীন, তাইওয়ান, মধ্য আফ্রিকা থেকে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। বাংলাদেশ থেকে পরবর্তী সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর। আবহাওয়া অধিদফতর (বিএমডি) বলছে, আকাশ মেঘমুক্ত থাকাসাপেক্ষে সারা দেশ থেকে আজ আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। ঢাকার স্থানীয় সময় দুপুর ১১টা ২৩ মিনিট ৩ সেকেন্ডে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে। দুপুর ১টা ১২ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে সূর্যগ্রহণের সর্বোচ্চ পর্যায় ও দুপুর ২টা ৫২ মিনিট ৩ সেকেন্ডে গ্রহণ শেষ হবে। এই একই সময়ে ময়মনসিংহ ও বরিশাল থেকেও দেখা যাবে সূর্যগ্রহণ। এর ৬ মিনিট আগে রাজশাহী ও রংপুর, ৩ মিনিট আগে খুলনা এবং ৫ ও ৬ মিনিট পর যথাক্রমে সিলেট ও চট্টগ্রামে শুরু হবে সূর্যগ্রহণ। একই সময়ের বিরতিতে ওইসব অঞ্চলে শেষ হবে সূর্যগ্রহণ।
 
মূল বা বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে আফ্রিকার কঙ্গো শহরের ইম্পফোন্ডো ও রোমা শহর, ভারতের যোশীমঠ শহর এবং ফিলিপাইনের সামার ও মিন্দানাও দ্বীপ থেকে।
 
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী তার নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। একই সঙ্গে চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। সূর্য ও পৃথিবীকে নিয়ে একটি তল কল্পনা করলে চাঁদ সাধারণত সেই তলে থাকে না। কিন্তু কোনো কোনো অমাবস্যায় পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চাঁদ সেই তলে একই সরলরেখায় চলে আসে। সূর্য চাঁদের আড়ালে চলে যায়। চাঁদের সংকীর্ণ ছায়া তখন পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করে। সেই ছায়া যেসব জায়গার ওপর দিয়ে যায় সেখান থেকে মনে হয় সূর্য ধীরে ধীরে ঢেকে যাচ্ছে। ছায়ার কেন্দ্রে যেসব অঞ্চল পড়বে সেখান থেকে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। কেন্দ্রের বাইরে আংশিক গ্রহণ দেখা যাবে। বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ তুলনামূলকভাবে পৃথিবীর কাছে থাকায় চাঁদেও কৌণিক ব্যাস সূর্যের কৌণিক ব্যাস হতে কম থাকে। ফলে পূর্ণগ্রহণ হলেও চাঁদ সূর্যকে পুরো ঢাকতে পারে না। সূর্য বলয় আকারে চাঁদের ছায়ার চারদিকে দেখা দেয়।
 
বেসরকারি গবেষণা গ্রুপ অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মো. শাহজাহান মৃধা জানান, সূর্যগ্রহণ খালি চোখে দেখা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এক্স-রে ফিল্ম, নেগেটিভ, ভিডিও-অডিও ক্যাসেটের ফিতা, সানগ্লাস, ঘোলা বা রঙিন কাচে এসব ক্ষতিকর অতিবেগুনি ও অবলোহিত রশ্মি আটকায় না। তাই কোনোক্রমেই এগুলো দিয়ে সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করা যাবে না। অনুসন্ধিৎসু চক্রের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ১৩ ও ১৪ গ্রেডের ওয়েল্ডিং গ্লাস বা আর্ক গ্লাস দিয়ে নিরাপদে সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করা যায়। ১১ গ্রেডের ওয়েল্ডিং কাচ দিয়েও গ্রহণ দেখা যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে দুটি কাচ একত্রে জোড়া দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। তবে কোনো ফিল্টার দিয়েই একনাগাড়ে বেশিক্ষণ তাকানো যাবে না। সোলার ফিল্টার ছাড়াও পিনহোল ক্যামেরা দিয়ে কোনো কাগজ বা পর্দার ওপর সূর্যের প্রতিবিম্ব ফেলে গ্রহণ দেখা যেতে পারে।
 
এক বিজ্ঞপ্তিতে অনুসন্ধিৎসু চক্র জানিয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে নিজ নিজ বাসস্থান থেকে চোখের যথাযথ সতর্কতা অবলম্বনপূর্বক সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
 
এমএম/এমএইচ/বাংলাবার্তা