প্লাস্টিকের তৈরি এই মসজিদে মুসল্লিরা আসেন দলবেঁধে

ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিকের তৈরি মসজিদ
ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিকের তৈরি এই মসজিদ

ফিচার:

 
প্লাস্টিকের ফেলনা বোতল দিয়ে অনেকেই টুকিটাকি কারুশিল্প গড়ে তোলে। এসব জিনিস দেখতেও বেশ নান্দনিক ও রুচিসই হয়ে থাকে। শো-পিস হিসেবে এই শিল্পের বেশ কদর রয়েছে বর্তমান বিশ্বে। আবার প্লাস্ট্রিকের ঝুঁড়ি দিয়েও অনেকে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে থাকেন। তবে সে সংখ্যা খুবই কম।
 
এমনই ফেলনা প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আস্ত একটি মসজিদ। নান্দনিক এই মসজিদে মুসল্লীরাও ছুটে যান দলবেঁধে নামজ পড়তে। এই মসজিদের অবস্থান ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায়। সেখানেই আকর্ষণীয় এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।
 
মোট ১২০৮টি ফেলনা প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি দিয়ে নান্দনিক এই মসজিদটি তৈরি করা হয়। এই ছোট মসজিদটি সবসময় মুসল্লিদের সালাত ও কোরআন তিলাওয়াতের আওয়াজে মুখরিত থাকে। প্লাস্টিকের ঝুড়ি দিয়ে তৈরি এই মসজিদটির আয়তন ৪৪০ বর্গফুট। এটি নির্মাণ করা হয় ২০১৯ সালে।
 
ইন্দোনেশিয়ার কেবিন আইডিয়া নামক প্রাকৃতিক আমেজে ঘেরা একটি রেস্টুরেন্টের প্রার্থনাকক্ষ। বিনতারো শহরে নির্মিত কোটাক্রাট নামক এই প্রার্থনাকক্ষটি তৈরির উদ্দেশ্য ছিল প্রার্থনার পাশাপাশি সুন্দর স্থাপত্য প্রদর্শন করা।
 
বাতিল প্লাস্টিকের ঝুড়ি ব্যবহার করে এই ছোট মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনাটি ছিল খুবই চমৎকার। তাছাড়া সেখানকার লোকজন বলে আমাদের রেস্টুরেন্টের অতিথি ও কর্মচারীদের জন্য একটি প্রার্থনাকক্ষেরও প্রয়োজন ছিল। প্রথমে অনেকে বুঝতেই পারেনি যে, এটি একটি মসজিদ।
 
এই ছোট মসজিদটি স্থানীয় স্থাপত্যশিল্প প্রতিষ্ঠান প্যারাসৌলি আর্কিটেক্ট স্টুডিও কর্তৃক নির্মিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি সমাজে বহুমুখী উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান স্থাপত্যশিল্পী এরিও উইরাসটোমো জানান, বহুমুখী উন্নয়নমূলক কাজের অংশ হিসেবে আমরা এই মসজিদটি তৈরি করেছি। শুধু এই মসজিদটি নয় বরং বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট দোকান, প্রার্থনাকক্ষ, আশ্রয়স্থান, বাসস্টপ, নিরাপত্তা চৌকি ইত্যাদিও আমরা স্বেচ্ছামূলক উপায়ে তৈরি করে থাকি।
 
এসব স্থাপনা আমরা বাতিল প্লাস্টিকের ঝুড়ি দ্বারা নির্মাণ করি। কারণ প্লাস্টিকের ঝুড়ি দিয়ে তৈরি কোনো স্থাপনা যে কোনো সময় যে কোনো আকৃতিতে পরিবর্তন করা যায়, আর এসব ঝুড়ি দিয়ে খুব সহজেই স্থাপনার ছাদ ও দেয়াল বানানো যায়।
 
এই মসজিদটির ছাদ, দেয়াল ও জুতা রাখার স্থান বানানোর জন্য সর্বমোট ১২০৮ টি প্লাস্টিকের ঝুড়ির প্রয়োজন হয়েছে। এই মসজিদটিতে মুসল্লিদের ওজু করার জন্য পানির কলও রয়েছে। দেয়াল ও ছাদ বানাতে ঝুড়িগুলো জোড়া লাগানোর জন্য লোহার কুড়ুপ ব্যবহার করা হয়েছে। আর ছাদ ধরে রাখার জন্য ফাঁপা ধাতব খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে।
 
সৌন্দর্য বর্ধনে মসজিদের চারপাশে বিভিন্ন গাছ লাগানো হয়েছে। যাতে করে পরিবেশটা ঠাণ্ডা থাকে। তাছাড়া মসজিদের মধ্যে নামাজের পাটি, জায়েনামাজ রাখার তাকও রয়েছে। মসজিদটিতে নারী-পুরুষের প্রবেশের জন্য দুটি ভিন্ন দরজা রয়েছে। ছোট্ট এই প্রর্থনাকক্ষে মোট তিন কাতারে নামাজ পড়া যায়। প্রতিটি কাতারে নয়জন করে মুসল্লি দাঁড়াতে পারে।
 
স্থাপত্যশিল্পী এরিও উইরাসটোমো জানান, যেহেতু মুসলমানরা যেখানেই থাকুক না কেন তাদেরকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত অবশ্যই আদায় করতে হয়। তাই এই ছোট প্রার্থনাকক্ষটি রেস্টুরেন্টে আসা অতিথিদের উপকারে আসবে।
 
পুরোনো প্লাস্টিকের ঝুড়ি ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমরা জনগণের মধ্যে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পারি। পাশপাশি প্লাস্টিকও পুনরায় ব্যবহার করতে পারি।
তথ্যসূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা