বাংলাবার্তা ডেস্ক: বিএনপির সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীকে নিয়ে রহস্যের শেষই হচ্ছে না। যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি এম এ মালিক বলেছেন, হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা যাননি বরং ঢাকাতেই তার মৃত্যু এবং দাফন হয়েছে।
এদিকে তার চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর শুরু হওয়া আলোচনার যেন সমাধানই হচ্ছে না। হারিছ চৌধুরী তাহলে কোথায় ছিলেন এখন তা নিয়েই তৈরি হয়েছে রহস্য। গোয়েন্দা সংস্থা, সরকার ও এত এত বিএনপি নেতার চোখ এড়িয়ে হারিছ চৌধুরী কিভাবে ঢাকায় অবস্থান করলেন সে প্রশ্নও উঠেছে।
যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি এম এ মালিক বলেন, ‘হারিছ চৌধুরী তিন মাস আগে মারা গেছেন বাংলাদেশে। আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলছি হারিছ চৌধুরী ১/১১-এর পর কখনই বাংলাদেশ ছাড়েননি। তিনি এমনকি ভারতেও যাননি। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিলেন।’
এম এ মালিক দাবি করেন, ‘হারিছ চৌধুরী ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে ঢাকাতেই ছিলেন। লন্ডনের বিষয়টা টোটালি ভিত্তিহীন। কারণ তার সঙ্গে আমার পারিবরিক, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো। তার ছেলে-মেয়ে, ভাবি সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। তিনি ঢাকাতেই মারা গেছেন এবং ঢাকায় দাফন করা হয়েছে। এটা সত্য ঘটনা, আমি খুব ঘনিষ্ঠ সূত্রে বিষয়টা জানি এবং তাকে ঢাকায় দাফন করা হয়েছে। এ বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত থাকতে পারেন, তিনি লন্ডনে আসেননি। তার বড় বোনের ঢাকার বাড়িতে থাকতেন। মাঝেমধ্যে অন্য ভাইদের বাসায়ও থাকতেন। এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, তিনি বাংলাদেশের বাইরে কোথাও আসেননি, কখনো আসেননি।’
এদিকে, হারিছ চৌধুরী সম্পর্কে কোনো তথ্যই জানেন না বলে দাবি করেছেন যুক্তরাজ্য বিএনপি সাধারণ সম্পাদক কায়সার আহমেদ। তিনি বলেন, ‘তিনি কখনো যুক্তরাজ্যে ছিলেন কিনা বা এসেছিলেন কি না কিছুই আমাদের জানা নেই। মৃত্যুর সংবাদ পত্রিকা মারফতে জেনেছি।’
গত মঙ্গলবার চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর জানাজানি হয়। আশিক উদ্দিন চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘যে সময় তিনি মারা যান আমি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলাম। মারা যাওয়ার খবর মোবাইলে জানতে পারি। হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন। পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেপ্টেম্বরের দিকে তিনি যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী জোসনা আরা চৌধুরী, ছেলে নায়েম শাফি জনি চৌধুরী ও মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী যুক্তরাজ্যে অবস্থা করছেন।’
বিএনপি স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেও হারিছ চৌধুরীর বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। একজন নেতা বলেন, হারিছ চৌধুরী দলেও নেই, কোথাও নেই। কোথায় পালিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তা খোঁজ রাখার প্রয়োজন নেই।
জানা যায়, ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর হারিছ চৌধুরী সস্ত্রীক তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে যান। কয়েক ঘণ্টা পর যৌথ বাহিনী হারিছের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু তার আগেই তিনি সরে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে কিছুদিন সিলেটের এখানে-ওখানে লুকিয়ে থাকার পর ওই মাসেই জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে ভারত চলে যান। ভারতের আসামে করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে তার নানাবাড়ি। সেখানেই তিনি ওঠেন। এরপর শোনা যায় হারিছ চৌধুরী ইরানে ছিলেন। আরও শোনা যায় হারিছ চৌধুরী স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকতেন। ২০১৮ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার সাত বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হারিছ চৌধুরী ও সিলেট সিটির মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা