নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে যোগ দেন রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলি। প্রেষণে তিন বছর কর্মরত থাকার বিধান থাকলেও তিনি প্রায় ৫ বছর ধরে এই পদে আছেন। দীর্ঘদিন একই পদে থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এই কর্মকর্তা।
অভিযোগ রয়েছে পরিদর্শনের নামে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আদায় করেছেন মোটা অংকের টাকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি, অতিরিক্ত শ্রেণি খোলাসহ যেকোনও বিষয়ে পরিদর্শনে গিয়ে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেছেন তিনি।
টাকা না দিলে হুমকি ও অশোভন আচরণের স্বীকার হচ্ছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতিবেদকের কাছে বিদ্যালয় পরিদর্শকের দূর্ব্যবহার ও চাঁদা আদায়ের কথা জানিয়েছেন।
গত ২৮ মার্চ বিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ৪টি বিদ্যালয়ে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পরিদর্শন করে ১ লক্ষ টাকা আদায় করেন বিপ্লব গাঙ্গুলি। জানা গেছে তার পক্ষে এ টাকা সংগ্রহ করে গাড়ির ড্রাইভার।
চন্দনাইশের শুচিয়া জে আরকে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কমিটি বাবদ ১লক্ষ টাকা গ্রহণ করে গত বছরের জুন মাসে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ৫০ হাজার টাকা দিলে তিনি কমিটি দিতে অস্বীকার করেন। এ অবস্থায় এলাকার বিশিষ্টজনেরা বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
চন্দনাইশ উপজেলার খাগরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আকতার হোসেনকে গালিগালাজ করে রুম থেকে বের করে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে ড.বিপ্লব গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে। পরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বিষয়টি বোর্ড চেয়ারম্যানকে জানালেও চেয়ারম্যান নীরব ছিল।
রাঙামাটির বরকল উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন তিনি।ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়নে মাইজভাণ্ডার আহমাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে ১০ হাজার টাকা নেন। মোটা দাগের অর্থ না পাওয়ায় ক্ষুদ্র অপরাধে তিনি বিদ্যালয়ের কমিটি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া চাকতাই গ্রামার স্কুলের পাঠদানের অনুমতি দেওয়ার কথা বলে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে জোর করে আদায় করেন ১৫ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মহানগরের একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেন না বিপ্লব গাঙ্গুলি। তাকে অফিসে পাওয়া যায়না। সরকার তাঁকে দিয়েছে জনসেবার জন্য। কিন্তু তিনি আখের গোছাতে ব্যস্ত।
বোর্ডসূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছরে ৬০০ স্কুল পরিদর্শনের নামে বিপ্লব গাঙ্গুলি ৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ ঘুষ হিসেবে আদায় করেছেন । চট্টগ্রামের সর্বমহল তার চাঁদাবাজির খবর জানে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নীরব আছেন বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার।
বিদ্যালয় পরিদর্শকের চাঁদাবাজি নিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায় বিপ্লব গাঙ্গুলি, তার স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে একাধিক ব্যাংকে আছে কোটি কোটি টাকা। নামে বেনামে ফ্ল্যাট আছে ৪টি। ২৫ লাখ টাকা দামের রাস ব্রান্ডের গাড়ী।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দাবি করেন, শিক্ষা বান্ধব বর্তমান সরকার যখন সকল সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে তখন বিদ্যালয় পরিদর্শকের বেপরোয়া চাঁদাবাজি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তারা অবিলম্বে এহেন অপকর্ম বন্ধে দ্রুত তদন্ত পূর্বক বিদ্যালয় পরিদর্শকের অপসারণ ও শাস্তি দাবি করেন।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সচিব সোলেমান খান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।