বাংলাবার্তা ডেস্ক:
২০১৩ ও ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রক্টরের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌলা। সেসময় তার বিরুদ্ধে ছাত্র হত্যায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিলো। এমনকি ছাত্রলীগের মধ্যে গ্রুপিং বাঁধিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও নানান অনিয়মে অভিযুক্ত প্রক্টর সিরাজ উদ দৌলার পদত্যাগের দাবিতে সেসময় দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধ করে রেখেছিল ছাত্রলীগ। এবারও কি তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে!
সম্প্রতি চবির ছাত্র উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌলার পদত্যাগের দাবিতে ইতোমধ্যেই উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সোমবার (২রা ডিসেম্বর) সকাল থেকে ছাত্রলীগের একাংশের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের তিনটি দাবির মধ্যে রয়েছে সিরাজ উদ দৌলার অপসারণের দাবিও।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর সংঘর্ষে জড়ায় শাটল ট্রেনে বগি ভিত্তিক গ্রুপ সিএফসি ও ভিএক্সের নেতাকর্মীরা। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলে সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ও সিএফসি গ্রুপের কর্মি তাপস সরকারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। যার পুরো দায় প্রতিপক্ষ ভিএক্সের উপরে বর্তায়। অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন প্রক্টর সিরাজ উদ দৌলা ছিলেন ভিএক্স গ্রুপের নিয়ন্ত্রক।
মূলত এ ঘটনার পর পরই প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন ছাত্রলীগ। সেসময় তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফকেও আন্দোলনকারীরা তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে।
বহুল বিতর্কিত চবির লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌলা এবার যখন ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্বে এলেন, তখন শান্ত ক্যাম্পাসের পরিস্থিতিতেও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীদের। তারা বলেন, দীর্ঘদিন শাখা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও কেন্দ্র ঘোষিত দুই সদস্যের কমিটি আসার পর থেকে সংঘর্ষ, অন্তঃকোন্দল অনেকাংশেই কমে গেছে। কিন্তু হঠাৎ করে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে তাপস হত্যার মদদদাতা শিক্ষক সিরাজ উদ দৌলার পরিচালিত একটি চক্র।
তাদের অভিযোগ; ছাত্র উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ক্যাম্পাসে আধিপত্য কায়েমে তিনি আবারও তার অংশের ছাত্রলীগকে দিয়ে বিভিন্নজনকে মারধর ও সংঘাতের ঘটনা ঘটাচ্ছেন। যাদের মধ্যে রয়েছে তাপস হত্যায় অভিযুক্ত ভিএক্স গ্রুপের নেতা মিজানুর রহমান বিপুল ও প্রদীপ চক্রবর্তী দূর্জয়। দুজনই তাপস সরকার হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি।
তথ্যমতে অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌলা ছাত্র উপদেষ্টা হওয়ার পর থেকে তার অনুসারী পক্ষ ভিএক্সের সঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী সিএফসি গ্রুপের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সর্বশেষ রবিবার সন্ধ্যায় সিএফসির দুই নেতাকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে ভিএক্সের বিরুদ্ধে।
পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারধরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শাহ আমানত হলে থাকা সিএফসি এবং সোহরাওয়ার্দী হলে থাকা ভিএক্স গ্রুপের কর্মীরা রামদা, লোহার রড, পাইপ ও দেশীয় অস্ত্রসহ মহড়া দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে থাকা চবি প্রক্টর এবং পুলিশের গাড়িসহ ছয়টি গাড়ি ভাংচুর করে তারা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ চার রাউন্ড টিয়ারশেল ও জলকামান নিক্ষেপ করে।
এদিকে রোববার সন্ধ্যা থেকে সিরাজ উদ দৌলার পদত্যাগের দাবিতে মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। সোমবার (৩রা ডিসেম্বর) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণা করে শাখা ছাত্রলীগের একাংশ।
ছাত্রলীগের এই অংশের নেতাদের দাবি; তাপস হত্যায় মদদদাতা সিরাজ উদ দৌলাকে বর্তমান প্রশাসন ছাত্র উপদেষ্টার পদে বসানোর পর থেকেই আবারো তাপসের খুনীরা বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। সিরাজ উদ দৌলার অনুসারী বিপুল ও দূর্জয়ের নেতৃত্বে দুই ছাত্রলীগ নেতার উপর নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তাপস হত্যার মদদদাতা সিরাজ উদ দৌলার প্রত্যক্ষ মদদে ও তাপস হত্যার আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাদের দুই নেতার ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। পাশাপাশি ছাত্র উপদেষ্টা সিরাজ উদ দৌলার অপসারণ করা হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলবে। তবে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে দুইদিনের জন্য অবরোধ শিথিল করা হয়েছে।
ভিএক্স গ্রুপের নেতা মিজানুর রহমান বিপুল বলেন, গত কয়েক দিনের অস্থিতিশীল পরিবেশ চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেলের ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে।