চবি প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে উঠেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। চলন্ত বাসেই তিনি যৌন হয়রানির শিকার হন। গত বুধবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী সোহাগ পরিবহনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যা লিখেছেন চবির এই ছাত্রী।
“হ্যাঁ আর ৫ টা মেয়ের মতো আজ আমিও মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি!”
পটিয়া গিয়েছিলাম বোনের বাসায় বেড়াতে। সাধারণত ট্রেনেই আসা যাওয়া করি আমি। বমির সমস্যা থাকায় বাসে কম উঠি। দুলাভাই এর বাসা পটিয়ার মুন্সেফবাজার। উনি বলেছিলেন, গলি থেকে বের হলেই নাকি বাস পাওয়া যায়। নতুন ব্রিজ কিংবা টার্মিনাল এর বাস। বাসা থেকে নেমে রিকশা নিয়ে মেইন রোডে এসে সোহাগ পরিবহনের একটি বড় বাস উঠলাম। বাসের সহকারীকে জিজ্ঞেস করলাম বহদ্দারহাট যাবে কিনা? যাবে বলায় এক আন্টির পাশে গিয়েই বসলাম আমি। সহকারী দুইজনের মধ্যে একজন এসে ভাড়া চেয়ে কোথায় যাবো জিজ্ঞেস করলে আমি ২নং গেইট যাওয়ার কথা বলি। সাথে জিজ্ঞেস করেছিলাম কোথায় নামলে সুবিধা হয়? উনি বললেন টার্মিনাল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমি একা কিনা? ভেবেছিলাম হয়তো ভাড়ার জন্য, বা ভাড়া নেয়ার জন্য জিজ্ঞেস করছে। তাই হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়েছিলাম।
এরপর থেকে উনি আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলো। কিন্তু আমি অত পাত্তা না দিয়ে বসে ছিলাম। নতুন ব্রিজ আসার পর আমার পাশের আন্টি নেমে যায়। এরপর বহদ্দারহাট কিনা জানিনা, একটা জায়গায় এসে বাস দাঁড়ায় এবং অনেকেই নেমে যান। আমিও নেমে যাচ্ছিলাম। এসময় সহকারী বললো আপনি তো ২ নাম্বার গেট যাবেন আপনাকে ওখানেই নামিয়ে দিবো বসেন। আমি দরজার পাশে প্রথম সিটে আবারো বসলাম। বাস ড্রাইভার আয়না দিয়ে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। আমার তখন কিছুটা সন্দেহ হতে থাকে। পিছনে ফিরে দেখি একটা মানুষও নেই পুরো বাসে। আমি তখন আমাকে নামিয়ে দিতে বললাম।
এরপর দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা সহকারী খুব তাড়াতাড়ি দরজাটা আটকে দেয়। আমি চিৎকার করে বললাম ‘ড্রাইভার বাস থামান আমি নামবো’। উনি না শোনার ভান করছিলো। আমি ৯৯৯ নাম্বারে কল দেয়ার জন্য টাইপ করছিলাম। এসময় বাসের সহকারী এসে টান মেরে আমার ব্যাগ নিয়ে যায়। আমি ব্যাগ আটকানোর জন্য উনার সাথে টানাটানি করছিলাম। পুরো সময়টা আমি চিৎকার করছিলাম জানালা দিয়ে। একপর্যায়ে সহকারী আমাকে দরজার সাথে খুব জোরে ধাক্কা দেয়। এরপর আমি পা দিয়ে দরজায় লাথি মারছিলাম আর চিৎকার করছিলাম। সহকারী একজন আমার হিজাব ধরে টানছিলো। আমি কাঁদছিলাম আর দরজায় লাথি মেরে নিজেকে বাচাঁনোর চেষ্টা করছিলাম।
রাস্তার কিছু মানুষ সম্ভবত ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলো। একপর্যায়ে ড্রাইভার বললো ‘ছেড়ে দে, সুবিধা নাই।’ পরে বাস থামালে আমি দ্রুত নেমে পুলিশ বক্স খুঁজছিলাম। আমার কাছে তখন সবকিছু ঝাপসা মনে হচ্ছিলো। তাই বাসের নাম্বারটা দেখতে পারিনি। পরে একটা রিকশা নিয়ে বাসায় আসলাম।
এদিকে থানায় অভিযোগ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পায়নি বলে জানিয়েছেন চাঁন্দগাও থানার ইন্সপেক্টর আব্দুর রহিম।
চবি প্রক্টর অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান জানিয়েছেন আইনি ব্যবস্থা নিলে তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন।