২৮ বছরেও এমপিও হয়নি সৌদিয়া বাজার জুনিয়র হাইস্কুল, নেপথ্যে কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার সৌদিয়া বাজার জুনিয়র হাইস্কুল দীর্ঘ ২৮ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। এমনকি বর্তমানে কোনো বৈধ শিক্ষকও নেই এই স্কুলে। খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হওয়া এ স্কুলের একমাত্র বৈধ শিক্ষক মো. মাঈন উদ্দিন বাংলাবার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

২০১৮ সালে নোয়াখালী জজকোর্টে মাঈন উদ্দিনের করা একটি মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়। এতে আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী, সরফ উদ্দিন সবুজ, মফিজ উদ্দিন মেম্বার, দেলোয়ার হোসেন, মাস্টার রেজাউল হক, মাস্টার আবুল কাসেম, জামাল উদ্দিন মেম্বার, নাজিম উদ্দিন মেম্বার, কামাল উদ্দিন লিটন, মাস্টার আবু নাসের মুন্সি, মোস্তফা কামাল মিন্টু এবং কামাল উদ্দিন বুলবুলকে বিবাদী করা হয়।

মামলার বর্ণনায় বলা হয়, ১৯৯৪ সালে সৌদিয়া বাজার জুনিয়র হাইস্কুলের তৎকালীন সভাপতি মাষ্টার আবুল কাশেমের স্বাক্ষরিত রেজুলেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাইন উদ্দিন সৌদিয়া বাজার জুনিয়ার হাই স্কুলের একজন ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে ১৯৯৪ সালে যোগদান করেন। এ স্কুলে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্কুলের যাবতীয় কাজে নিজের অর্থ ব্যয় করে স্কুলের সার্বিক উন্নয়ন করেছেন। ২০০৩ সালে ডিডিপি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে বিদ্যালয় এমপিও করণের বিষয়ে ও কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য পরামর্শ দেন।

কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অবহেলা, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে এখনো বিদ্যালয়টি কুমিল্লা বোর্ড কর্তৃক একাডেমিক স্বীকৃতি পায়নি। তাছাড়া সহকারি প্রকল্প পরিচালক ড. সুধাংশু রঞ্জন অত্র মোকদ্দমার বিবাদীদেরকে বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন করার জন্য তাগিদ দেন। ২০১৩ সালে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে বিদ্যালয়টির রেজিষ্ট্রেশনের জন্য অডিটর কামরুজ্জামানকে অডিট করার জন্য অডিটর হিসেবে দায়িত্ব দেন।

অডিটর কাগজপত্র ও কার্যকলাপ পর্যালোচনা করে বাদি মাইন উদ্দিনকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নির্বাচন করেন এবং কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে বিদ্যালয় পরিচালনা ও কার্যকরী কমিটি অত্র বিদ্যালয়ের কোন উন্নয়নের কথা বিবেচনা করেনি এবং কুমিল্লা বোর্ডের সাথে কোন কার্যক্রম কিংবা যোগাযোগ করছেন না।

‌বাদী শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরও বাঁদিকে বিদ্যালয় কার্যকরী কমিটি বিদ্যালয়ে পাঠদান থেকে বঞ্চিত করে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে আরও ৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বাধির প্রতি অন্যায় করেছেন। এমনকি বাদিকে দীর্ঘদিনের সম্মানী ভাতা প্রদান করছেন না। বাদিকে কোন ধরনের নোটিশ না দিয়ে এবং বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক পদে পাঠদানের সুযোগ না দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বাদির নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী মাসিক সম্মানি ভাতা প্রদান না করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইন ৭,৮,৯ ও ১০ নং ধারা অনুযায়ী কার্যক্রম না করে বিবাদীগন অর্থাৎ বিদ্যালয় কার্যকরী কমিটি আইনগত অপরাধ করছেন।

বাদীর বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা যেমন- টাইম স্কেল, গ্রাচুইটি, সার্ভিস প্রক্রিয়া ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত করে বাদীর জীবন দুর্বিষহ করে তুলে।

শিক্ষক মাইন উদ্দিন বারবার সৌদিয়া বাজার জুনিয়র হাইস্কুলের পরিচালনা ও কার্যকরী কমিটি বরাবর দরখাস্ত দেন এবং পরবর্তীতে লিগ্যাল নোটিস প্রেরণ করেন, কিন্তু বিবাদীগন অর্থাৎ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এতে কোনো কর্ণপাত করছেন না।

এমনকি বিদ্যালয় পরিচালনা ও কার্যকরী কমিটি ও ভাতাদির বিষয়ে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও বিবাদীগন এ বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করছেন না। বাদী পক্ষ কর্তৃক ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল এবং ২৪ এপ্রিল পাঠানো লিগ্যাল নোটিশের কোন জবাব দেয়নি বিবাদীরা।

এছাড়াও ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি মাইন উদ্দিনের শিক্ষকতা পদ বাতিল করেছে এবং ভাতা সমূহ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

শিক্ষক মাইন উদ্দিন বাংলাবার্তাকে বলেন, ২৪ বছর এখানে কোনো বৈধ শিক্ষক নেই। সবাই খণ্ডকালীন শিক্ষক। ইউপি চেয়ারম্যান স্কুলের সভাপতির দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও স্কুল এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। কারন বিদ্যালয়ের একমাত্র বৈধ শিক্ষক আমি। আমার সাক্ষর ছাড়া এমপিওর জন্য আবেদন করতে পারবেন না তারা। তাছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি আমার দীর্ঘদিনের সার্ভিস প্রক্রিয়ার ক্ষতি করে আসছে। আমি আদালতের মাধ্যমে এর সুষ্ঠু বিচার ও সমাধান চাই।

এমএইচ/বাংলাবার্তা