করোনাভাইরাস গবেষণা: বাংলাদেশে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

করোনা- অ্যান্টিবডি
করোনা- অ্যান্টিবডি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
 
করোনা ভাইরাস নিয়ে নতুন এক গবেষণায় বাংলাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে করোনার সঙ্গে সংযুক্ত একটি ডিএনএ’র অংশ বিশেষ ৬০ হাজার বছর আগে উপমানব প্রজাতি থেকে মানুষের শরীরে এসেছে। আর এই নিয়ান্ডারথলের এই বিশেষ প্রকরণ বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশিদের শরীরেই সবচেয়ে বেশি রয়েছে। বাংলাদেশের ৬৩ শতাংশ মানুষের মধ্যেই এই জিনোমের অন্তত একটি সংস্করণ পাওয়া যায়।
দক্ষিণ এশিয়া জুড়েও তুলনামূলকভাবে এর বিচরণ বেশি। এই অঞ্চলের ৩৩ ভাগ মানুষ বংশ পরম্পরায় এই জিন পেয়েছেন। এই চিত্র উঠে এসেছে সুইডেনের বিশ্ববিখ্যাত ক্যারোলিনস্কা ইন্সটিউটের গবেষণায়। নিউইয়র্ক টাইমস চাঞ্চল্যকর এই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেছে।
 
যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনতাত্বিক জশুয়া আকে বলেন, এই গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ৬০ হাজার বছর আগে যেই সংকর প্রজনন ঘটেছিল, তার প্রভাব আজও মানুষের মধ্যে পড়ছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে এই নিয়ান্ডারথল জিন ক্ষতিকর। সামগ্রিকভাবেই এটি বিরল হয়ে উঠছে। আবার এ-ও সম্ভব যে, এই জিন দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের শরীরে থাকায় তাদের স্বাস্থ্যে উন্নতি ঘটিয়েছে। সম্ভবত এই জিনের উপস্থিতি থাকায় এই অঞ্চলের মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তভাবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পেরেছে।
 
গবেষকরা বোঝার চেষ্টা করছেন যে, কেন কোভিড-১৯ কিছু মানুষের জন্য খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠে, আর কিছু মানুষের ক্ষেত্রে একেবারেই সাদামাটা আচরণ করে। মোটাদাগে বলা হয়,
 
বয়স্করা এবং নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি ঝুঁকিতে। এছাড়া সামাজিক বৈষম্যও বড় ফ্যাক্টর।ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনতাত্বিক টনি ক্যাপ্রা বলেন, এটি সম্ভব যে, ডিএনএ’র নিয়ান্ডারথল অংশবিশেষ প্রকৃতপক্ষে সুরক্ষাকবচ হিসেবেই কাজ করতো প্রথমে, এমনকি ভাইরাসের বিরুদ্ধেও। তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের মনে রাখতে হবে এটা ছিল ৪০ হাজার বছর আগে। আর এখন তো আলাদা সময়।’
 
তার মতে এমন হতে পারে যে, প্রাচীন ভাইরাসের বিরুদ্ধে যেই ইমিউন সিস্টেম কাজ করতো, সেটি নতুন এই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যেমন, কোভিড-১৯ রোগে যারা গুরুতরভাবে অসুস্থ হন, তাদের মধ্যে দেখা গেছে যে, তাদের ইমিউন সিস্টেম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বা অত্যাধিকভাবে ভাইরাসকে নির্মুল করতে শুরু করে।
 
এসব কারণে গবেষণার অন্যতম লেখক ও জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট ফর ইভোলিউশনারি অ্যান্থ্রোপলজির পরিচালক সভান্তে পাবো মত দেন, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মানুষের মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হওয়ার আংশিক কারণ হয়তো হতে পারে তাদের শরীরে এই নিয়ান্ডারথল জিনের উপস্থিতি।
 
ওদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল দুই হাজার ১৫১ জনে। এই সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২৭ জন। সবমিলিয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৪৫ জনে।
 

এমএম/এমএইচ/বাংলাবার্তা