নিউজ ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজারের বেশি। যেভাবে দ্রুত এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে তা মানুষের মধ্যে এতটাই ভীতির সঞ্চার করেছে যে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সামাজিক মাধ্যমে নানা উপদেশ পরামর্শ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এবং মানুষও মরীয়া হয়ে এসব পরামর্শ মানতে শুরু করেছে।ৎ
কিন্তু এসব পরামর্শ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরীক্ষিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হচ্ছে না। বিবিসির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিভাগ ‘রিয়ালিটি চেক’ সংক্রমণ ঠেকানোর এরকম কয়েকটি দাবি পরীক্ষা করে দেখেছে।
১. নি:শ্বাস বন্ধ করে পরীক্ষাদাবি করা হচ্ছে আপনি যদি ১০ সেকেণ্ড নি:শ্বাস বন্ধ করে থাকেন এবং সেসময় যদি আপনি কোন কষ্ট অনুভব না করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার ফুসফুসে কোন ফাইব্রোসিস নেই। অর্থাৎ আপনার ফুসফুসের টিস্যু বা কলায় কোন ক্ষতি হয়নি, তা স্বাভাবিকের তুলনায় মোটা হয়ে যায় নি। সোজা কথায় আপনার ফুসফুসে সংক্রমণ নেই। এ তথ্য আদৌ সঠিক নয়। কারণ ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হয়েছে কিনা তা নি:শ্বাস বন্ধ করে পরীক্ষা করা যায় না। তাছাড়া, ফাইব্রোসিস কোভিড-১৯ সংক্রমণের কোন উপসর্গ নয়।মনে রাখবেন কোভিড নাইনটিনে আক্রান্ত হলে তার প্রধান উপসর্গ হচ্ছে খুবই বেশি জ্বর এবং সঙ্গে একনাগাড়ে কাশি।
২. ঘরে হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার তৈরির প্রণালীহাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য ঘরে বসেই স্যানিটাইজার তৈরির যেসব প্রণালী ইন্টারনেটে ছড়ানো হচ্ছে সেগুলো থেকে সাবধান।কোন আসবাবপত্র বা টেবিল বা যেসব জিনিসে আপনি হাত দিচ্ছেন – সেগুলো জীবাণুমুক্ত করার জন্য মোছার যেসব বস্তু পাওয়া যায় সেগুলো আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৩. জীবাণুনাশক ভডকা? ইন্টারনেটে এমন দাবি করা হচ্ছে যে মদ্যপানীয় ‘ভডকা’ জীবাণুনাশকের কাজ করবে। আদতেই তা নয়। ভডকা-তে যথেষ্ট পরিমাণ অ্যালকোহল নেই যা জীবাণু মারার জন্য প্রয়োজন।
৪. কোন কোন ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের আয়ু এক মাস অনলাইনে ছড়ানো খবরে দাবি করা হচ্ছে। কোন সারফেসের ওপর বা যেকোন জায়গার ওপর ভাইরাস এক মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এটা প্রায় অসম্ভব। কারণ, সার্স বা মার্স-এর মত করোনাভাইরাস নিয়ে আগে যেসব গবেষণা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, কঠিন কোন জায়গার ওপর যেমন ধাতুর তৈরি, কাঁচ বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি কোন সারফেসের ওপর করোনাভাইরাসের জীবাণু বেঁচে থাকে প্রায় দু‘ঘন্টা থেকে সর্বোচ্চ নয় দিন।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের গবেষণাকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সরকার বলেছে কোন কঠিন বস্তু স্পর্শ করলে যেমন টেবিলের ওপর, হ্যাণ্ড রেলিং বা এধরনের অন্য কিছু, সেখান থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি ৭২ ঘন্টা পর ব্যাপকভাবে কমে যায়।
৫. গোমূত্র পান ভারতে কিছু হিন্দু গোষ্ঠি মনে করে গোমূত্রের এমন কিছু চিকিৎসা গুণ রয়েছে যা করোনাভাইরাস এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন গোমূত্রের এমন কোন গুণ নেই। তারা বলছেন গোমূত্র যেমন ক্যান্সার সারায় না, তেমনি গোমূত্র কোভিড নাইনটিন ঠেকাতে সক্ষম এমন কোন তথ্যপ্রমাণ নেই। মানুষ থেকে মানুষের দেহে এই ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় সে বিষয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
এরই মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাত ধোয়া বা পরস্পরের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলার মত কিছু নির্দেশাবলী জারি করেছে।
কাজেই সবচেয়ে ভাল পরামর্শ হলো: ভাল করে ঘন ঘন হাত ধোয়া, আর সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা
এমডি/ এমএইচ/বাংলাবার্তা