ইস্রাফিল রনি,
সম্প্রতি ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক ২০১৮ সালে ঘটে যাওয়া নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সায়েদুর রহমান ফায়েল হত্যা মামলার রায় দেয়া হলো। রায়ে হানিফ পরিবহনের অভিযুক্ত ৩ জনকেই মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হলো যারা একটি হত্যাকে সড়ক দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলে। সড়কে প্রাণহানির ঘটনা বাংলাদেশের একটা জাতীয় সমস্যা। এটি বর্তমানে মৃত্যুর একটি ফাঁদে পরিনত হয়েছে যেন জনজীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই। আকষ্মিক একটি প্রাণ ঝরে যাওয়ার সাথেই ক্ষতির মুখে পড়ে যায় একটি পরিবার একটি সমাজ এবং এটি রাষ্ট্রেরও অবনতির একটি কারণ হতে পারে। আমাদের দেশের যানবাহনে হতাহতের কারণ হিসেবে অনেকেই অনেক কারণ দাঁড় করায়। কিন্তু আমার মতে যানবাহন হত্যাকে দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার প্রবনতাই এমন অপমৃত্যুর জন্য দায়ী। বলতে গেলে আমাদের দেশের মানুষ এমনকি শিক্ষিত শ্রেনীও এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করেনা যে, সকল সড়ক ট্রাজেডি দূর্ঘটনা নয় বরং হত্যাও হতে পারে। আমাদের দেশে সড়ক পরিবহন সংক্রান্ত অনেক আইন আছে যেমন,সড়ক পরিবহন অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ সড়ক ট্রাফিক আইন ১৯৮৮,মারাত্মক দূর্ঘটনা আইন ১৮৫৫। এ ছাড়াও সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ খুবই চমৎকার। এতে সড়কে হতাহতে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তকে ৩০২ ধারায় ফাঁসি, যাবজ্জীবন অথবা ৫০০০০০ টাকা জরিমানার কথাও উল্লেখ আছে। কথা হলো এত এত আইনের পরেও এসব হতাহতের ঘটনা কমবে না যতদিন আমরা দূর্ঘটনা আর হত্যার পার্থক্য করতে পারবো এবং জনগন এবং সর্বস্তরের মানুষকে এ বদ্ধপরিকর ধারণা থেকে বের করে আনতে পারবো। টর্ট আইনে অনুসারে যদি কেনো চালকের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও এমন হতাহতের ঘটনা ঘটে যায় যাতে চালকের কোনো ন্যাগলিজেন্স ছিলোনা এবং যা পূর্বানুমানের বিষয়ও না তবেই এটি দূর্ঘটনা বলে গন্য হবে। কিন্তু চালকদের অহেতুক প্রতিযোগিতা, মাদকাসক্ত হয়ে গাড়ি চালানো, অভার লোডিং,ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে বেপরোয়া মানুষ হত্যা দূর্ঘটনা নয়। সুতরাং এ বিষয়ে সকলে সচেতন হওয়া উচিত। যতই আইন থাকুক না কেন যতদিন আমরা যানবাহন হত্যাকে দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারবোনা ততদিনে এমন হত্যা আরো ব্যাপক আকার ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কাছে আমার আবেদন থাকবে যে,সকল ধরনের যানবাহনের একটি অথরিটি গঠন করে চালকদের লাইসেন্স দেয়ার আগে যদি প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা যায় এবং প্রত্যেক যানবাহনে হতাহতের ঘটনা যে দূর্ঘটনা নয় এ বিষয়ে জন সচেতনতা তৈরী করা যায় তবেই আশা করা যায় এসব হতাহতের ঘটনা কমে আসবে।
লেখক,
ইস্রাফিল রনি। আইন বিভাগ,চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।