নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাণঘাতী করোনা সারা বিশ্বে এখন আতঙ্ক ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এর ভয়াল থাবা কেড়ে নিয়েছে হাজারো মানুষের প্রাণ। আক্রান্ত হয়েছে লাখো মানুষ। তবে সুস্থও হয়েছে অনেকে। কিন্তু কোনোভাবেই এই ভাইরাসকে নিঃশেষ করা যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত জিনের গঠন বদলে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে মহামারিতে রূপ নেয়া এই ভাইরাস।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিইএইচও) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা কোনোভাবেই এর প্রতিষেধক বানাতে সক্ষম হয়নি। তাই বলে থেমে নেই চেষ্টা। এই মরণ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার উপায় আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, ইজরায়েল, পোল্যান্ডের বিজ্ঞানী-গবেষকরা।
সংকটপূর্ণ এই মুহূর্তেই তুরস্কের একজন গবেষক জানিয়েছেন কীভাবে করোনার ভয়াল থাবা থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। তার দাবি, করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর আশঙ্কা কমিয়ে দিতে পারে পর্যাপ্ত ঘুম। এটি শরীরের ন্যাচারাল কিলার সেল বাড়িয়ে দেয়। পরে এই কিলার সেল ভাইরাস ও ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। তিনি বলেছেন, আইসোলেশনে থাকাকালে পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে শরীরের ডেথ সেল বাড়িয়ে করোনাকে হারিয়ে দেয়া সম্ভব।
তুর্কি এই গবেষক জানিয়েছেন, ঘুমের ব্যাঘাত হলে শরীরের ন্যাচারাল কিলার সেলগুলো কমে যায়। এই কোষগুলো টিউমার এবং ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ভাইরাসকে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধ করতে হলে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।
তুরস্কের এডিরিন প্রদেশের তার্কিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবৃত্ত বিশেষজ্ঞ লেভেন্ট ওজতুর্ক বলেন, ‘শরীরের ইমিউন সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করার মূল চাবিকাঠি হল স্বাস্থ্যকর ঘুম। ঘুম ভালো হলে শরীর প্রাকৃতিকভাবেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে একে পরাজিত করতে পারে ‘
এমনকি মাত্র এক রাতের পর্যাপ্ত ঘুমেও শরীরে প্রাকৃতিক ঘাতক লিম্ফোসাইটের সংখ্যা এবং ক্রিয়াকলাপ হ্রাস পায় যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন তিনি।
শারীরবৃত্ত বিশেষজ্ঞ লেভেন্ট ওজতুর্ক বলেন, শরীরের যে ন্যাচারাল কিলার সেলগুলো সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরি করে এবং দেহে প্রবেশকারী ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে ঘুমের মাধ্যমে সেগুলো অধিক কার্যক্ষম হয়ে ওঠে। এগুলিই এমন কোষ যা আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল কম লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং বেশি বেশি ঘুমানো।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের একটি সহজতম উপায় হল, বাড়ি থেকে কাজ করা। এই মুহূর্তে আমাদের বাঁচতে হলে বাড়িতে থেকে কাজ করার অভ্যাস করতে হবে। তাই বাড়িতে আমরা ছুটি বা অলস কাটানো সময়টাতে ঘুমাতে পারি। তবে বাড়িতে থাকলে টেলিভিশন, কম্পিউটার এবং মুঠোফোনের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সামনে বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না। এগুলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
এর আগে নিজের এক গবেষণায় ওজতুর্ক বলেছিলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, এবং এইচ ১ এন ১ এর মতো বিভিন্ন রোগের টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে ঘুমের প্রভাব রয়েছে। অপর্যাপ্ত ঘুম ভ্যাকসিনের প্রদত্ত সুরক্ষা অর্ধেক কমিয়ে দেয়। তবে তিনি দিনের বেলায় ঘুম যথা সম্ভব এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
এমডি/ এমএইচ/ বাংলাবার্তা