ফাহিম হাসান
করোনার মহামারিতে অধিকাংশ মানুষ যেখানে ঘরে বসে অতিষ্ঠ, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ, ঠিক উল্টো চিত্রটি বাংলাদেশ পুলিশের ক্ষেত্রে।
ইতোমধ্যে পুলিশের সব ধরণের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। একজন কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের আইজি স্যার পর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘন্টাই ডিউটি করছেন, কোথাও বসা’তো দূরে থাক, অনেকে একটু দাঁড়ানোর সুযোগও পাচ্ছেন না। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশতো দেখলাম সাধারণ মানুষের বাজারও করে দিচ্ছেন!
অনেকেই বলবেন, বিনা পয়সায়তো তাঁরা এসব কাজ করছে না, সরকারতো মাসশেষে তাঁদের বেতন দিচ্ছে, এরাতো জনগণের চাকর। ব্লা ব্লা ব্লা…!!
ঠিক তাদের উদ্দেশ্যে বলছি; আচ্ছা, বলেন দেখি রাস্তার পাশে একটা পঁচা, দুর্গন্ধ বেওয়ারিশ লাশ পড়ে আছে। কতটাকার বিনিময়ে আপনি একে স্পর্শ করবেন? মাঁটি খুঁড়ে কবর দিবেন?
করোনায় মৃত একজনকে কাঁধে নিবেন, সৎকার করবেন, কবরে নামিয়ে মাঁটি দিবেন, ঠিক কতটাকা হলে?
কতটাকা দিলে প্রিয়জন পরিবার সন্তান-সন্ততি ছেড়ে দেশকে বাঁচানোর ব্রতী নিতে পারবেন? দুর্যোগ ও মহামারিতে নিজ পরিবারকে ভুলে অন্য পরিবারের দায়ভার নিবেন?
ফাঁসির দড়িতে ঝুলে থাকা লাশটাকে কতটাকার বিনিময়ে জড়িয়ে ধরে নামাতে পারবেন? মাঁটিতে কবর দেওয়া লাশটা চার-পাঁচমাস পর খুঁড়ে পুনঃময়নাতদন্তের জন্য তুলতে কতটাকা নিবেন?
কতটাকা দিলে হলি অার্টিজেনের মত জঙ্গিদের সামনে নিজ বুকটা পেতে দিতে পারবেন? কীসের বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে জড়াতে পারবেন?
জানি এসব বিষয়ে আপনি টাকার কথা বলবেন না। কারণ কোটি টাকা দিলেও আপনি হয়তো এসব কাজ করবেন না। অথচ দেখেন, একজন পুলিশ সদস্যের দৈনন্দিন রুটিন কাজই এগুলো।
সুতরাং টাকা-পয়সা, ঘুষ কিংবা অর্থ দিয়ে একজন পুলিশকে মাপবেন না, কারণ সংকটকালে এরাই মাঠে থাকে, রাতে পাহাড়া দেয় বলে আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমান, করোনায় মৃত লাশটা ছেড়ে পরিবার যখন পালায়, ঠিক তখনি পুলিশরা একে কাঁধে নিয়ে জানাজা পড়িয়ে কবরে দুমুঠো মাঁটি দেয়!
তাই বলি পুলিশ, সেতো বেতনের বিনিময়ে চাকরিজীবী নয় বরং জীবনের বিনিময়ে দেশ রক্ষাকারী একজন বীর সৈনিক।
গর্বিত আমি বাংলাদেশ পুলিশ পরিবারের একজন সদস্য।