‍ইসরাইলি আধিপত্য বজায় রেখে ‘নতুন ফিলিস্তিন’ গড়বেন ট্রাম্প!

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন পরিকল্পনা- যেটিকে বলা হচ্ছে ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’- সেই চুক্তির শর্তগুলো প্রকাশ করেছে হিব্রু ভাষার একটি ইসরাইলি সংবাদপত্র। ‘ইসরাইল হায়োম’ নামের পত্রিকাটি চুক্তির প্রধান প্রধান শর্তগুলো প্রকাশ করেছে।

ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফাঁস হওয়া একটি নথির সূত্র ধরে এটি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ইসরাইলি আধিপত্য বজায় রেখে ‘নতুন ফিলিস্তিন’ নামের একটি রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যে রাষ্ট্রটির ওপর থাকবে ইসরাইলের সব ধরনের প্রভাব। রাষ্ট্রটির থাকবে না কোন সেনাবাহিনী।

মিডলইস্ট মনিটর জানিয়েছে, চলতি রমজান মাসের পর জুনের শুরুতে চুক্তিটি প্রকাশ করার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। ইসরাইল ঘনিষ্ঠ ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও মার্কিন প্রশাসনের প্রস্তাবিত শর্তগুলো প্রাধান্য পেয়েছে চুক্তিতে।

চুক্তির প্রধান শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে: ত্রিপক্ষীয় এই চুক্তি অনুযায়ী অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা নিয়ে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে, যেটির নাম হবে ‘দ্য নিউ প্যালেস্টাইন’ বা ‘নতুন ফিলিস্তিন’। তবে পশ্চিম তীরে স্থাপিত ইসরাইলের ইহুদি বসতিগুলো এই রাষ্ট্রের বাইরে থাকবে। এই বসতিগুলো ইসরাইলের অংশ থাকবে।

চুক্তি অনুযায়ী আগামী তিন বছরের মধ্যে ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে ইসরাইল।

জেরুসালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের নাগরিক হবেন তবে জেরুসালেম পৌরসভা ও ভূখণ্ডের মালিক হবে ইসরাইল। নবগঠিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র জেরুসালেমের শিক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্ব পালনের জন্য ইসরাইলকে কর দিতে বাধ্য থাকবে।

পবিত্র স্থানগুলোর অবস্থা আগের মতোই থাকবে এবং ইসরাইলি ইহুদিরা ফিলিস্তিনিদের কোন জমি কিনতে পারবে না, ফিলিস্তিনিরাও পারবে না ইহুদিদের জমি কিনতে।

‘নতুন ফিলিস্তিন’ রাষ্ট্রকে বিমানবন্দর, শিল্প কারখানা ও কৃষি ব্যবস্থা স্থাপনের প্রস্তাব দেবে মিসর। তবে সেসব জমিতে (মিসরীয় বিনিয়োগকৃত) কোন ফিলিস্তিনি বসবাস করতে পারবে না।

ইসরাইলি ভূখণ্ডের মধ্যে দিয়ে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরকে সংযুক্ত করতে একটি মহাসড়ক নির্মিত হবে। এই তহবিলের প্রধান দাতা হবে চীন। তারা ব্যয়ের অর্ধেক বহন করবে। বাকি অর্ধেক দেবে দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

চুক্তির স্পন্সর কারা
ফাঁস হওয়া নথিতে দাবি করা হয়েছে, ‘নতুন প্যালেস্টাইন’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য আগামী পাঁচ বছর এই চুক্তিকে স্পন্সর করবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও উপসাগারীয় আরব দেশগুলো। এই কাজে প্রতি বছর ব্যয় হবে ছয় শ’ কোটি মার্কিন ডলার। যার ৭০ শতাংশ বহন করবে উপসাগরীয় দেশগুলো। বাকি ২০ শতাংশ দেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ১০ শতাংশ দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

‘নতুন ফিলিস্তিন’ রাষ্ট্র কোন সেনাবাহিনী গঠন করতে পারবে না। তবে তাদের একটি পুলিশ বাহিনী থাকবে। ইসরাইলের সাথে রাষ্ট্রটির একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে যার অধীনে ইসরাইল এই ‘নতুন ফিলিস্তিন’ রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার বিষয়টি দেখভাল করবে।

চুক্তি সম্পাদনের পর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস তাদের সকল অস্ত্র মিসরের কাছে হস্তান্তর করবে। বিনিময়ে হামাসের নেতাদের ক্ষতিপূরণ ও বেতন দেবে আরব দেশগুলো।

‘নতুন ফিলিস্তিন’ রাষ্ট্র গঠনের এক বছরের মধ্যে সেখানে নির্বাচন হবে।

গাজা উপত্যকা, মিসর ও ইসরাইলের মধ্যেকার সকল সীমান্ত উন্মুক্ত থাকবে জনগন ও মালামাল পরিবহনের জন্য। ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। জর্দানের সাথে দুটি সীমান্ত ক্রসিং থাকবে, যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ‘নতুন ফিলিস্তিনের’ হাতে। তবে জর্দান ভ্যালি থাকবে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণেই।

চুক্তিতে বলা হয়েছে, যদি হামাস কিংবা অন্য কোন ফিলিস্তিনি পক্ষ চুক্তি মানতে রাজি না হয় তবে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিকে দেয়া অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেবে। অন্য রাষ্ট্রগুলোকেও চাপ দেবে সহায়তা বন্ধের জন্য। তবে যদি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস চুক্তিতে রাজি হয় কিন্তু হামাস কিংবা ফাতাহ মানতে না চায় তবে গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে শুরু হবে হামলা।

অন্যদিকে যদি ইসরাইল এই চুক্তি মানতে না চায় তবে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেবে। বর্তমানে দেশটিকে প্রতি বছর প্রায় চার শ’ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।