হয়তো এই লিখাতেই অনেকে দলীয় ট্যাগ বা উদ্দেশ্য খুঁজবেন

আওলাদ হোসেন সাগর

আমাদের অনেকের খুব জানতে ইচ্ছা করছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে কতজন আওয়ামীলীগের, কতজন বিএনপির। কতজন মুক্তিযুদ্ধার প্রজন্ম, কতজন রাজাকারের উত্তরসূরি। কতজন কসাই ডাক্তার, কতজন ফাঁকিবাজ শিক্ষক (মাস্টর!), কতজন দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা, কতজন অসাধু ব্যাবসায়ী আর ও কত কত কি। ও আচ্ছা কতজন উপদলীয় অমুক ভাইয়ের অনুসারী কতজন তমুকের (অমুকের প্রতিদ্বন্দ্বী) অনুসারী। কতজন হিন্দু, কতজন মুসুলমান। খুব অবাক লাগে আমাদের এই স্প্লিটেড সমাজ ব্যবস্থা দেখে। বেশ কয়েকদিন ফেইসবুক এ নিয়মিত হওয়ার কারণে দেখলামআমাদের অনেকের মাঝে কি পরিমান ক্ষোভ আছে একে অন্যের প্রতি।

আমাদের অনেকের কাছে কারো মৃত্যু আনন্দের সঞ্চার করে আবার কারো মৃত্যু অনেক কষ্ট দেয়। কিন্তু দুইজনের কাউকেই চিনিনা শুধুমাত্র। করোনা শুরুর সময় একটা ছবি ফেইসবুক এ দেখলাম করোনা রোগী যেন দুর্নীতিবাজদের সাথে কোলাকোলি করে। যাতে দুর্নীতিবাজ মরে যায় ! কি মজা না। কি সুন্দর জিহাদ ঘোষণা করলেন। একবার চিন্তা করেন তো নির্বাচন আসলে / প্রয়োজন হলে আমরা ওনাদের সাফাই গাইতে গাইতে গলার পানি শুকাই ফেলি। তা না হয় বাদ দিলাম,, আমরাতো সেই শিক্ষিত সমাজ দুই নম্বরি করে ট্রেনের টিকেট নিয়ে চাকরির ইন্টারভিউতে বলি —আমাকে চাকরিতে নিতে পারেন কারণ আমি সৎ। আসলেই আমরা সবাই সৎ তবে তা হলো ” সুযোগের অভাবে সৎ”. কিন্তু তার বাইরেও কিছু ভাল মানুষ সবখানে আছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশটা তাদের কারণেই টিকে আছে।

মানুষ এতটা চামচাবাজী, দলীয় চাটুকারিতা কিভাবে করতে পারে। বিশেষকরে শিক্ষিত নামদারী যুব সমাজরা ? আমার মাঝে মাঝে মনে হয় কালকে যদি মির্জা ফখরুল বলে ধর্ম-কর্ম করা ভাল তাইলে অনেক আওয়ামীলীগ ধর্ম -কর্ম ছেড়ে দিবে কারণ মির্জা ফখরুল তো ভাল কথা মোটেই বলতে পারেনা সে বিএনপি বা নিশ্চয় কোন দুর্বিসন্দী আছে। একই কথা যদি ওবায়দুল কাদের বলে অনেক বিএনপি ধর্ম-কর্ম ছেড়ে দিবে কারণ সে তো আওয়ামীলীগ বা নিশ্চয় ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য বলতেছে। চিন্তা করেন জাতী হিসাবে আমরা এতটা স্প্লিটেড। আর একটা বিষয় দেখলাম, আমরা খুবই পরশ্রীকাতর। বিশেষকরে শ্রেণী- বৈষম্য তৈরি করতে। আমিই সেরা বাকিরা শুধু অলস বসে বসে বেতন নেয়। কথায় কথায় সবাই বলি আমরা জনগণের জন্য কাজ করছি। ..সবাই যদি কাজ করি তাইলে জনগণটা কোথায়? আসলে আমরা কেউই জনগণের জন্য কাজ করিনা।

শুধুমাত্র বেতন এর জন্য। কিছু দুর্জন বেতনের বাইরে অন্যের চাহিদা মেটানোর জন্য দুর্নীতি করি। আজকের এই দুঃসময়ে বা নিজেকে জাহির করি ফেসবুকে। আমার কাছে অবাক লাগে যে ছেলেটাকে ইউনিভার্সিটি ট্রেনে, আড্ডাতে, ক্লাসে নৈতিকতার সর্বোত্তম আইকন জানতাম সে কেমনে দুর্নীতি করে। অনেকদিন পর জানতে পারলাম (সবক্ষেত্রে সত্য নাও হতে পারে) আমরাই তাকে দুর্নীতিবাজ হতে বাধ্য করলাম। তার কাছ থেকে বন্ধুত্বের আবদারে, ভাই হিসাবে, মামা হিসাবে, শালা হিসাবে বউ হিসাবে অনেক কিছু চাইলাম যদিও আমি/আমরা জানি বৈধ ভাবে সে তা পারবেনা। সে যদি না পারে আবার বলবো সে আমাদের জন্য কিছুই করেনি। সুতরাং আসেন এবার আবদার মেটাই।

সামাজিক চাহিদা তো আছেই- আমি ভালো না হলে জগৎ কখনো ভালো হবেনা। প্রিয় ভাইসব করোনা শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য আওয়ামীলীগ বা বিএনপির পাপের ফল নয়। এটা একটা বৈশ্বিক স্বাস্থ গত সমস্যা এবং বাংলাদেশের জন্য বড় আর্থিক সমস্যাও। এটা নিশ্চই বলার অপেক্ষা রাখেনা বাংলাদেশের স্বাস্থ অবকাঠামো খুবই দুর্বল। এটার জন্য আমাদের ঐতিহাসিক রাজ্নৈতিক কাঠামোই দায়ী। কারণ আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের এতটা দূরদর্শিতা ছিলনা আজকের এই পরিস্তিতির জন্য। কারণ আমরাতো বঙ্গবন্ধু-তাজউদ্দীন দের অনেক আগেই হারিয়েছি।

কেন বললাম জানেন ? একদিন বঙ্গবন্ধুর কাছে নালিশ করলেন তাজউদ্দীন নাকি আমলাদের কথা শোনছে না। বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীন কে ডাকলেন কেন জানতে চাইলেন। উত্তরে তাজউদ্দীন বললেন আমলারা সিদ্ধান্ত দেন ফাইল দেখে আমি সিদ্ধান্ত নি জনগণের পালস বুঝে (আমি আমলাদের কে ছোট করার জন্য আজকে এটা উল্লেখ করিনাই, বর্তমানে আমলাদের সাথে আমরা অনেক চাটুকার, ধান্ধাবাজ যুক্ত হয়েছি). আরেকদিন গণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামের জন্য যখন জাফরুল্লাহ বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলেন কয়েকটা নাম নিয়ে আবার ওনাদের বিপত্তি (অবশই উনাদের একটা যুক্তি ছিল) তার পর বঙ্গবন্ধু জাফরুল্লাহকে বাসার ভিতরে নিয়ে একটা সমধান করল যার সুফল আমরা আজ পেতে যাচ্ছি। সুতরাং বেশি দলবাজি না করে সব পেশার মানুষ কে নিয়ে আজ মহা প্রলয়ে খাঁটি বাঙালির পরিচয় দি। আপাতত বাদ্দেন আপনার মাস্টরগিরি, আমলাগিরি, দলীয়ই লেবাজ এবং পরশ্রীকাতরতা। সবাইকে সম্মান করি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসি। উপদলীয় যুদ্ধ করার এখন সময় নয়। কারণ আমাদের সবার একটাই “বাংলাদেশ ” স্স্থু হয়ে ওটুক প্রিয় ” বাংলাদেশ”. এবং বিশ্ব।


হয়তো এই লিখাতেই অনেকেই একটা দলীয় ট্যাগ বা কোনো উদ্দেশ্য খুঁজবেন। আসলে তা নয়। মন খারাপ থেকেই লিখা

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ফিন্যান্স বিভাগ- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এসএস/এমএইচ/বাংলাবার্তা