‘শ্মশান যাত্রী’ এক পূণ্যাত্মার গল্প

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী:


ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ শহরের গলাচিপা এলাকার।‌ স্বনামধন্য ব্যবসায়ী খোকন সাহার আকস্মিক প্রয়াণের কথাই বলছি। ৭ তলার ফ্ল্যাট ভবনের মালিক অংশীদার তিনি। ৭ বন্ধু মিলে ফ্ল্যাট বাড়িটি তৈরি করেন। পরিবার নিয়ে থাকতেন সেই ভবনের ৪ তলায়।‌ অকস্মাৎ তাঁর শারীরিক অবস্থা প্রচন্ড খারাপ হয়।তাঁর স্ত্রী ও ছোট দুই মেয়ে আশপাশের ফ্ল্যাটে থাকা বন্ধু স্বজন, পরিচিত ও আত্মীয়দের অনেককেই ডেকেছিলেন। কেউ শুনেননি তাদের ডাক।

হাসপাতালে নেয়ার জন্য সহযোগিতায় কেউ এগিয়ে আসেননি।‌ শেষ পর্যন্ত স্ত্রী কন্যারা এই ব্যবসায়ীকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে সিড়ি হয়ে নামিয়ে আনার পথে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।‌ শোকে স্তব্ধ পরিবারের সদস্যদের সামনে সিঁড়িতেই পড়ে থাকে দেহ। অসহায় স্ত্রী-কন্যার কান্নায়ও এগিয়ে আসেনি কেউ! মন গলেনি কারো ! খবর পেয়ে খোকন সাহার শবদেহ সৎকারে ছুটে আসেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ । স্বজনরা কেউ না আসায় পরিবারের অনুমতি নিয়ে খোকন সাহার মুখাগ্নির কাজটিও করেন এই কাউন্সিলর।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিলয় চক্রবর্তীর ২৭শে এপ্রিল ২০২০ ইংরেজি দেয়া তথ্যগুলো উপস্থাপন করলে খোকন সাহার বিদায়যাত্রাটি ঠিক এরকম। শ্মশান যাত্রী হিসেবে মাকসুদুল আলম খন্দকারের ভূমিকাটিও পূণ্যবান আত্মার উপস্থিতির মতই। করোনা ভাইরাসে বৈশ্বিক সঙ্কটের মাঝে বাংলাদেশের অনেক বিত্তবান এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত অনেক প্রতিনিধির আচরণ যখন প্রশ্নবিদ্ধ, এখনো আমরা অনেকেই যখন রাজনীতির ঘেরাটোপ থেকে মানবিকতার কাতারে সমবেত হতে পারিনি, তখন মাকসুদুল আলম খন্দকারের মতো পূণ্যাত্মা’ই আমাদের এই সংকট মুক্তিতে আলোর ঝিলিক। ‌

লেখক: আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগ ও সহ-সভাপতি, বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন