শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়া হয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিবে করোনা

মুমিন মাসুদ

সরকারের আশপাশ থেকে বারবার বলা হচ্ছে “আমরা আপনার পাশে আছি, আতঙ্কিত হবেন না।” তখন মনে বল বেড়ে যায়। বিশ্বাস করেন, হয়তোবা এই সাহসের ঠেলায় করোনা কোন বস্তু হলে তার সাথে যুদ্ধজয়ে নেমে পড়তো বাংলার দামাল ছেলেরা। আমরাও বিশ্বাস করতে চাই যে, সরকার আমাদের পাশে আছে। আমাদের সকল সুখ দুঃখের জন্যে আমাদের নয়, সরকারের টেনশন আছে। কী না ভালো লাগে এমনটা ভাবতে!


কিন্তু, যখন মিরপুরে মারা যাওয়া বাবাকে নিয়ে ছেলের স্ট্যাটাসটি দেখি!! যখন দেখি একটা সিট ম্যানেজ করতে হাসপাতালে হিমশিম খাচ্ছে! যখন দেখি নিউমোনিয়া নাম দিয়ে করোনাকে বৈধতা দিচ্ছে! যখন আইইডিসিআর’ এর নাম্বারে দেড়ঘন্টা ট্রাই করে ফোন পেলেও বিদেশ ফেরত না থাকায় বা তাদের কারো সংস্পর্শে না থাকায় তাকে করোনা পরীক্ষা করা হয়নি বলে শুনি! ঠিক তখনি মনের কোনে একটা অভদ্রপূর্ণ গালি সমেত এমন “সাহস” প্রদানকারীদের প্রতি মনটা বিষিয়ে ওঠে। তখনি বিশ্বাস করতে ভয় হয় “সরকার আমাদের সাথে আছে।”


এখন বলবেন মানুষ সরকারের কথা না শুনলে কী করবেন? ভ্লাদিমির পুতিন বলা যায় শুধুমাত্র এক লাইনেই তার ভাষণ সমাপ্ত করেছেন। “হয় ১৫ দিন ঘরে বন্দী রাখুন নিজেকে নয়তো ৫ বছর জেলে বন্দী থাকুন” ব্যাস। আর কিছু বলা লাগে না। কাজের কাজ কিছু না করে শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে এমন মহামারি মোকাবেলা করা যায়না। শুধুমাত্র মুখের জোরে নিজেকে আমাদের পাশে দাঁড় করিয়ে করোনাকে থামানো যায়না। পিপিই, মেডিক্যাল কিট, টেস্ট কিটসহ সকল ধরণের প্রোটেকশনের যেখানে সংকট সেখানে আমাদের পাশে দাঁড়ানো কথাটা কতোটা যৌক্তিক?


পূর্বে আপনাদের এহেন বক্তব্যে হাসি আসতো। এখন কান্না আসে। এসব ফাঁকা বুলি বিছানায় গিয়ে স্ত্রীর সাথে ঝাড়েন। আমাদের সাথে নয়। ইতালীর প্রধানমন্ত্রী হাল ছেড়ে দিয়েছেন। স্পেনে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইরান পাগল হয়ে পড়েছে। আমার দেশ তো উন্নয়নের শিখরে চড়ে এখন হাইড্রোজেন বোমার অধিকারী! এখানে এসে হয়তোবা করোনা জিন পাল্টে ফেলে নিউমোনিয়া হয়ে যাবে৷ সারাবিশ্বে করোনা রাজত্ব করবে আর বাংলাদেশে নিউমোনিয়া। শেষ পর্যন্ত হয়তো নিউমোনিয়া হয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে হবে করোনাভাইরাসকে।

বাংলার সবুজ ঘাস আপনাদের হাতে আমানত দিয়েছিল এই জনগন, এটা যদি করোনার থাবায় কালো হয় তবে দায়ী আপনারা থাকবেন।
সেদিনই তো এত্তগুলা “সিআইপি” ঘোষণা দিলেন। তারা কই? জাতীর প্রয়োজনে তাদের অর্থ ব্যয় না হলে ঐ অর্থ দিয়ে কাজ কী? ডাক্তারদের প্রোটেকশানের ব্যবস্থা করুন। আমাদের মাস্ক ও হেক্সিজল সাপ্লাই দিন। দোকানে হেক্সিজল নেই। কোন প্রোটেকশানের বালাই নেই, খালি পাশে দাঁড়ানোর বুলি আর আশার বাণী শোনান।

“করোনা কোন ভাইরাস নয়” টাইপের আচো* বাণী নয়। আমাদের মনকে ছুঁয়ে যাওয়ার মতো কাজ করুন। এমন সময়ে দলমত নয়, মানবিকতার দিকে তাকান। সবাইকে মানুষ মনে করুন। ফ্ল্যাটে থাকা আর বস্তিতে থাকা লোকগুলোকে এক মনে করুন। মুখে দাড়িওয়ালা আর দাড়িবিহীন সবাইকে এক দৃষ্টিতে দেখুন। করোনা আওয়ামিলীগ, বিএনপি, জামাত, ছাত্রলীগ, শিবির, ছাত্রদল, চরমোনাই, জৈনপুরী, দেওয়ানবাগী কিংবা কোনো দল বিবেচনাপূর্বক কারো উপর সওয়ার হবে না। তারা চিনবে একটি প্রাণ। সুতরাং আমাদেরও একটি প্রাণ হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।

লেখক: সাবেক সহসভাপতি- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি