মন্ত্রীদের বেঁফাস মন্তব্য; তাদের মুখে মাস্ক পরাবে কে?


ফাহমিদা স্নিগ্ধা


বাংলাদেশ এখন করোনা ভাইরাসের ‘স্প্রেডিং টাইম’ পার করছে। সারাদেশে ভয়ঙ্কর এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। তবে ভাইরাস প্রতিরোধে কাজের চেয়ে ঢোলই বেশি পেটাচ্ছেন সরকারের মন্ত্রীরা।


একের পর এক বেফাঁস মন্তব্যে ইতিমধ্যেই হাস্যরসের খোরাক জুগিয়েছেন মন্ত্রীপরিষদের অনেকেই। এতে বিরক্তও হচ্ছেন নাগরিকরা। করোনা নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সরকার ও এসব মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভও বাড়ছে।


মন্ত্রীদের যত বেঁফাস মন্তব্য
গত ৯ মার্চ করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মারাত্মক রোগ নয়, ছোঁয়াচে। এটি একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করে।’


১০ মার্চ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, বিএনপিসহ কিছু পত্র-পত্রিকা করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছাড়াচ্ছে। পরে ১৮ মার্চ তিনিই আবার বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, আমরা এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সামর্থ্য কম। ইউরোপের দেশগুলো যাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য, যাদের মেডিকেল সায়েন্স আমাদের থেকে অনেক ভালো। তারাও কিন্তু এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নাই। ইউরোপজুড়ে আজ এটি ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ আমাদের দেশে সেটি আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’


১২ মার্চ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী তখন কোনো ভাইরাস নিয়েই আমাদের চিন্তা নেই। কেননা জননেত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই আমরা সকল সমস্যার সমাধান খুঁজে পাব।’


১৭ মার্চ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান প্রয়োজনে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীনের মতো হাসপাতাল বানানো হবে। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি চীনের মতো দ্রুত কোনো হাসপাতাল করতে চায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী অর্থায়ন করতে না করবেন না বলে আমার বিশ্বাস।’


একই দিনে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রতি মুহূর্তে সাহস জোগাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার মতো এমন একজন নেত্রী পেয়েছি বলেই আজ আমরা করোনাকে প্রতিরোধ করতে পারছি।’


১৮ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘ইতালি ও স্পেন করোনা ভাইরাসকে সঠিক সময়ে আমলে না নিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়েছে। বাংলাদেশ এমন ভুল করতে চায় না।’


২১ মার্চ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা ভাইরাস এমন কোনো শত্রুশক্তি নয়- যাকে পরাজিত করা যাবে না। আমরা করোনা ভাইরাসের চেয়ে শক্তিশালী। জাতি হিসেবেও আমরা শক্তিশালী। কাজেই ভয়কে জয় করতে হবে। এ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।


সর্বশেষ ২৪ মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের কাছে মেডিকেল সরঞ্জাম চেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারী আকার নেয়ায় প্রত্যেক দেশেই করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মেডিকেল ইকুইপমেন্টের চাহিদা খুব বেড়েছে। কয়েকটি দেশ তাদের দেশে এই মেডিকেল ইকুইপমেন্ট দেয়ার জন্য আমাদের অনুরোধ করেছে। এমনকি স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের দেশে পাঠানোর জন্য আমাদের কাছে অনুরোধ করেছে। আমাদের ব্যবসায়িক মহল তাদের অনুরোধ বিবেচনা করছে।’


এদিকে ১১, ১৪ ও ২০ মার্চ- করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের সব ধরণের প্রস্ততি আছে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু ২৩ মার্চ এসে তিনি বলেছেন, করোনা মোকাবেলায় সরঞ্জামের ঘাটতি আছে।


মন্ত্রীদের এমন সব বেলাগাম বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে চলছে সমালোচনা। বিশিষ্ট জনরাও মন্ত্রীদের দৈনন্দিন বেফাঁস বক্তব্যে বিরক্ত হচ্ছেন।

এফএস/ এমএইচ/বাংলাবার্তা