বাংলাদেশের তাপমাত্রা করোনা’র বিস্তারকে ধীর করে দিতে পারে; সিকৃবি’র গবেষক দল

নিজস্ব প্রতিবেদক


সম্প্রতি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বাংলাদেশে করোনাভাইরসের সম্ভাব্য বিস্তার ও তাপমাত্রার প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। তাদের গবেষণাপত্রটি Research Square নামক ওয়েবসাইটে প্রি-প্রিন্ট হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাপত্রটি বর্তমানে ন্যাচার রিসার্স গ্রুপের একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের জন্য পর্যালোচনা চলছে।


বায়োইনফরম্যাটিক্স এর বিভিন্ন গবেষণাপদ্ধতি এবং স্যাটেলাইট ইমেজিং ও এপিডেমিওলজির বিভিন্ন ডাটাবেইজ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়। গবেষক দলে ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ বাশির উদ্দিন, ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান, একোয়াটিক রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আহমেদ হারুন-আল-রশীদ, এপিডেমিওলজি ও পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রভাষক ডাঃ মোঃ ইরতিজা আহসান এবং ও ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মোঃ আব্দুস শুকুর ইমরান ।

গবেষণাটির প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ছিলেন এপিডেমিওলজি ও পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদ। গবেষণাটিতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে মহিষ থেকে প্রাপ্ত একধরনের করোনাভাইরাসে জিনোমের সাথে সম্প্রতি কোভিড-১৯ (COVID-19) মহামারীর জন্য দায়ী সার্স-করোনাভাইরাস-২ (SARS-CoV-2) এর জিনোমের মধ্য তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। এছাড়া বিগত দিনগুলোতে রোগ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস গ্রুপের অন্যান্য ভাইরাস যেমন সার্স (SARS), মার্স (MERS) ও বাদুর থেকে প্রাপ্ত করোনাভাইরাসের মধ্যেও তুলনামূলক গবেষণা করে ফলাফল হিসেবে বলা হয় কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী সার্স-করোনাভাইরাস-২ পূর্বে বাংলাদেশে প্রাপ্ত মহিষ করোনাভাইরাসের সাথে কম সাদৃশ্যপূর্ণ ও সার্স ভাইরাসের সাথে অত্যধিক সাদৃশ্যপূর্ণ।

দ্বিতীয়ত, মার্চের ৯ তারিখ পর্যন্ত এপিওডেমিওলজির বিভিন্ন ডাটাবেইজ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গ্লোবাল কেস ফাটালিটি ও মৃত্যুহার তুলে ধরা হয়। সেই সাথে স্যাটেলাইট ইমেজিং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত চায়নার উহান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও বাংলাদেশের তাপমাত্রার তুলনামূলক তথ্য বিশ্লেষণ থেকে বলা হয় যে, বর্তমান তাপমাত্রা বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এর বিস্তারকে অনেকটা ধীরগতি করে দিতে পারে। একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের এম.আই.টি থেকে মার্চ ২০২০-এ প্রকাশিত গবেষণাতে বলা হয়েছে, সার্স-করোনাভাইরাস-২ এর প্রাদুর্ভাব ৩ থেকে ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে বেশী । একইভাবে, ইউরোপীয় গবেষকদের প্রকাশিত তথ্য মতে বিশ্বে কোভিড-১৯-এর ৯৫% কেস মূলত শীতপ্রধান দেশের যাদের তাপমাত্রা ৫ থেকে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস । যা এই গবেষণার তথ্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ।


তবে, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল দেশের মানুষকে সাবধান করে দিচ্ছেন যে, ইতিমধ্যেই সার্স-করোনাভাইরাস-২ ভাইরাসটির মধ্যে বিরূপ পরিবেশে নিজেকে পাল্টে ফেলার চারিত্রিক লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে বিধায় ঘনবসতিপূর্ণৃ বাংলাদেশে যাতে কমিউনিটি বিস্তার না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, নতুবা দেশ ভয়ংকর মহামারীর দিকে এগিয়ে যেতে পারে।


এমডি/ এমএইচ/ বাংলাবার্তা