সুনামগঞ্জ প্রতিবেদক
হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় সরকার নির্ধারিত সময় সীমার আট দিন অতিবাহিত হলেও শেষ হয়নি ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ। পাউবো কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহলোর কারনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হয়নি অভিযোগ কৃষকদের। ফলে শংঙ্কায় রয়েছেন এ অঞ্চলের হাজারো কৃষক পরিবার। কিন্ত উপজেলা কাবিটা মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটি দাবি করছে, বাঁধ মেরামত কাজে পিআইসিরা এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছেন । কৃষকদের অভিযোগ বাঁধের ৭০ ভাগ কাজও এখনো সম্পন্ন করতে পারেনি তারা।
এ ছাড়াও পিআইসি’র কমিটি গঠনসহ বাঁধ মেরামত কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠায় হাওরপাড়ের মানুষের একমাত্র বোরো ফসল ঘরে তোলা নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষকেরা। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ৮টি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত কাজে পাউবো’র অধীনে স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে ১৭৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়। এর বিপরীতে পাউবো থেকে ৩৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ওইসব প্রকল্পের কাজ শুরু করে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য পিআইসি কমিটিকে সময়সীমা বেঁধে দেয় পাউবো। কিন্তু বাঁধ মেরামত কাজে পাউবো’র বেঁধে দেওয়া সময়সীমার আটদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ৭০ ভাগ কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি পিআইসিরা। আর এ জন্য কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা পাউবো’র কর্মকর্তাদেরই দায়ী করে আসছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এছাড়াও পাউবো’র অধীনে গঠিত পিআইসি কমিটিগুলোতে স্থানীয় কৃষকদের অগ্রাধীকার ভিত্তিতে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির বিরুদ্ধে। হাওরে জমি নেই এমন লোকদের দিয়ে পিআইসি কমিটি গঠন করার ফলেই কাজে গাফিলতি করা হচ্ছে বলছেন স্থানীয়ারা।গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সরেজমিনে, উপজেলার গুড়মার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত কাজের , ৮০ নম্বর,৮০নম্বর ৮১ নম্বর, ৮৭ নম্বর , ৮৮, ৮৯.৯০, ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৫, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ৯৮, ১৯০, ১০৬. ১০৭ ও ৩৮ নম্বর প্রকল্প ও একই উপজেলার কাইলানী হাওর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের ৩৭, ৬৯, ৩৮, ৪৭ , ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫২, ৫৫ নম্বর প্রকল্প ও ঘুরাডোবা হাওর প্রকল্পের ৭০, ৭১, ৭২, ৭৪, ৭৫,৭৬ নম্বর প্রকল্প ও সোনা মড়ল হাওর প্রকল্পের ২৮, ২৯, ৩০,৩১, ৩৩, ৩৪,৩৫ নম্বর প্রকল্প ও চন্দ্র সোনারথাল হাওর প্রকল্পের ১৩৩, ১৩৪ ও ১৩৫, ১৩৬, নম্বর প্রকল্প এলাকা ছাড়াও জয়ধনা হার প্রকল্পের ৬৫, ৬১, ৬৩ নম্বর প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব বাঁধ মেরামত কাজে এস্কেভেটর মেশিনের ড্রাইভার ছাড়া পিআইসি’র কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি।এস্কেভেটর (মাটি কাটার মেশিন) দিয়ে কোনো কোনো বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটে বাঁধে ফেলা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো বাঁধে যেনতেনভাবে মাটি কেটে ফেলে রাখা হলেও সেখানে দুর্মূজ দিয়ে মাটি বসানোর কাজে কোনো শ্রমিককে পাওয়া যায়নি। এমনকি বাঁধ থেকে দূর্বা অপসারন না করেই বাঁধে মাটি ফেলতে দেখা গেছে। তবে প্রত্যেকটি প্রকল্প কাজেই দুই একজন করে শ্রমিককে কোদাল দিয়ে বাঁধের মাটি সমান করতে দেখা যায়। এছাড়াও দূর্মুজ দিয়ে শক্ত করে বাঁধের মাটি না বসানোয় গত দুই দিনের অল্প বৃষ্টিতেই অনেক বাঁধের মাটি দেবে গেছে এমনকি ছোট-ছোট ফাটলেরও সৃষ্টি হয়েছে।
এসময় উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আব্দুল হাই, একই গ্রামের কৃষক আল-আমিনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এই বছর বাঁধ মেরামত কাজে যে ভাবে গাফিলতি করা হচ্ছে তা দেখে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এখনো বাঁধের অর্ধেক কাজ সম্পর্ণ হয়নি। এছাড়াও বাঁধের খুঁটি (গোড়া) কেটে যেনতেনভাবে বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে। এবারও চৈত্র মাসের শুরুতেই পাহাড়ি ঢলে হাওরের যে কি অবস্থা হয় তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।এ ব্যাপারে উপজেলার গুরমা হাওরের ৮৯ নম্বর প্রকল্পের প্রকল্প সভাপতি রুপন সরকার জানান, আমার প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন শুধু মাটি বসানোর কাজসহ আনুসাঙ্গীক কিছু কাজ বাকি আছে। তবে আশা করছি ৩-৪ দিনের মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন করা হবে।
বাঁধ মেরামত কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারি প্রকৌশলী ও উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম জানান, এবার হাওরে পানি দেরিতে নামার কারণে কাজও দেরিতে শুরু হয়েছে। আমরা সঠিক ভাবেই বাঁধ মেরামত কাজের তদারকি করছি। তিনি আরো জানান এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে ২০টি প্রকল্প গঠনে বিলম্ব হওয়ায় সেগুলোর কাজ শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে এবং মাটি কাটার মেশিন (এস্কেভটর) নষ্ঠ হওয়ার কারণে ৫-৬টি প্রকল্পের কাজ শেষ হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। দ্রুতই সবক’টি প্রকল্পের কাজ-ই সম্পন্ন করা হবে।
উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব বলেন, বাঁধ মেরামত কাজে অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে ইতোমধ্যে দুই জন পিআইসিকে তিন দিনের জেল দেওয়া হয়েচ্ছে এবং ৭ জন পিআইসির কাছ থেকে জেল ও জরিমানা আদায়সহ তাদের কাছ থেকে মুচলেকা রাখা হয়েছে। তবে দ্রুততই বাঁধের কাজ শেষ করার জন্য আমরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, বাঁধ মেরামত কাজে কোনো ধরনের গফিলতি করা হলে আমরা কাউকেই ছাড় দেবনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও কাবিটা মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. সবিবুর রহমান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় পানি দেরিতে নামার কারণে কাজেও দেরি হচ্ছে। গত শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করে মাটি ভরাটের পাশাপাশি বাঁধের কম্পেকশন ও ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। কোথাও অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা