ধেয়ে আসছে দুর্ভিক্ষ, সামাল দিতে পারে কেবল কৃষি

নুর নবী রবিন


গণমাধ্যমেরর খবর অনুযায়ী বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে চাকরি হারানো লোকের সংখ্যা ১ কোটি। এতে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে তাদের পরিবারের ৬ কোটি মানুষ। এ সংখ্যাটা ক্রমবর্ধমান। দিনদিন মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। একের পর এক বন্ধ হচ্ছে আমদানি-রফতানি বানিজ্য এবং উৎপাদনশীল সবগুলো খাত। ফলে ভবিষ্যতে চরম দুর্ভিক্ষের শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। ১৯১৮ সালের পর সবচেয়ে বড় মহামারি এটি। ধারণা করা হচ্ছে দেশে লকডাউন পরবর্তী অবস্থা হবে আরো ভয়াবহ।


করোনা ভাইরাসের (কোভিড১৯) কারণে যতো মানুষ মারা যাবে, বিশেষজ্ঞদের মতে তারচেয়েও বেশি মানুষ মরবে দুর্ভিক্ষে; খেতে না পেয়ে। ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখলাম বেসরকারি হিসেব অনুযায়ী ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে খাবার না পেয়ে অানুমানিক ১ থেকে সাড়ে ৪ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। তাছাড়া দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বন্যা জলোচ্ছ্বাসের ফলে খাদ্য সংকটের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। ১৯৮৫ সালে উড়িরচরে প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ের পর দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছিল। আমার দাদি (সাজিয়া খাতুন) বলছিলেন, সরকার ও বিদেশী অনেক সংস্থা ত্রাণ দিলেও তখন অনেক মানুষ না খেয়ে দিনানিপাত করেছে। অনেকে ক্ষিদা সইতে না পেরে লবণাক্ত চরে জন্মানো এক ধরনের শাক সেদ্ধ করে খেয়েছে।

গত দু’দিন ধরে গণমাধ্যমের শিরোনামে দেখছি; খাবার জোগাতে না পেরে আত্মহত্যা করছে পিতা, আবার খাবার না পেয়ে কন্যা আত্মহত্যা করেছে। আরেকটি খবরে দেখলাম; ত্রাণের ট্রাক থেকেই লুট করে নিচ্ছে দরিদ্র অসহায় মানুষরা। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে সংকট কতো গভীর হচ্ছে! এখন এ ব্যাপারটি সহজে অনুমেয়; বর্তমানে করোনার প্রভাবে বিশ্ব এক মহামন্দার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।


দরজায় কড়া নাড়া এ দুর্ভিক্ষের কালো থাবা সামাল দিতে পারে কেবল কৃষি খাত। অর্থাৎ খাদ্যপণ্য উৎপাদন সচল রাখতে হবে। নাহয় অনাহারের মৃতের সংখ্যা গুণতে থাকা ছাড়া করার কিছুই থাকবে না। সরকার ইতোমধ্যে প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সেখানে কৃষি কাজের জন্য ৫ শতাংশ সুদের হারে ঋণের ঘোষণা এসেছে। আমার ধারণা এতে কৃষকরা লাভবান না ও হতে পারে। কৃষকরা অধিক উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ নাও হতে পারে। কৃষি ঋণে সুদের হার কমিয়ে দেওয়া অতীব জরুরি।


আরেকটি বিষয়, আমাদের দেশের কৃষকরা সাধারণত শিক্ষিত না। ফলে কৃষি ঋণের ব্যাপারে অনেক কৃষকই জ্ঞাত না। তাই তারা স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে অধিক হারে সুদ নিয়ে চাষাবাদ করে থাকেন। এতে ফসল উৎপাদনের পরও কৃষকদেরকেই উপবাস করতে হয়। সরকারের কাছে অনুরোধ; প্রান্তিক পর্যায়ে কীভাবে স্বচ্ছতার সাথে কৃষকদের সহায়তা করা যায়, তা নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া।


আমরা যাঁরা গ্রামে আছি অথবা কিছু একটা রোপন করার মতো যাঁদের সুযোগ আছে; তারা আসন্ন দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে কৃষিকাজে যুক্ত হোন। সামান্য জায়গা পেলে বীজ বপন করুন। মনে রাখবেন, আজ রোপন করলে ১৪ দিন পরে খেতে পারবেন। দুর্ভিক্ষে নিজের পরিবার পরিজনকে বাঁচাতে পারবেন। নিজে কৃষিপণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষিকাজের সাথে যুক্ত থাকা মানুষকে ভবিষ্যতের অশনি সংকেত সম্পর্কে সজাগ করে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখতে বলুন। উদ্বুদ্ধ করুন।


সামনের দুভিক্ষের প্রস্তুতির জন্য কাহলিল জিবরানের একটি কবিতা হতে শেষে কয়েক লাইন মনে করিয়ে দিচ্ছি-
‘মাটি তোমাদের ফল দেয়, ফসল দেয়সে ফসল মুঠো ভরে তুলতে জানলেতোমরা অভাবে পড়বে না কখনো।মাটির উপহার বিনিময়ের মধ্যেই পাবেতোমাদের প্রাচুর্য তোমাদের তৃপ্তি।’


লেখক: শিক্ষার্থী যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এসএস/এমএইচ/বাংলাবার্তা