‘তোমরা মহামারী এলাকা থেকে পালিয়ে যেওনা’ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

হাফিজ শফিক

৬৩৯ খ্রিস্টাব্দ। হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকাল। মদিনা থেকে হজরত উমর ‘সারগ’ নামক অঞ্চলে পৌঁছালে সেনাপতি আবু উবায়দা (রা.) জানান যে, সিরিয়ায় প্লেগ তথা মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

হজরত উমর প্রবীণ সাহাবাদের কাছে পরামর্শ চাইলেন যে, তিনি সিরিয়া সফর করবেন, নাকি মদিনায় ফিরে যাবেন? সাহাবাদের থেকে দুটি মত আসে। কিছু সাহাবি সিরিয়ায় যাবার ব্যাপারে পরামর্শ দেন, আর কিছু সাহাবি না যাওয়ার পরামর্শ দেন।

প্রবীণ সাহাবাদের কাছ থেকে দুটি মতামত পাওয়ায় পুনরায় পরামর্শের জন্য আনসার ও মুহাজির সাহাবাদের ডাকলেন। তারাও মতপার্থক্য করলেন।

খলিফা উমর (রা.) সবশেষে প্রবীণ কুরাইশদের ডাকলেন। তারা সকলেই এ মর্মে মতামত ব্যক্ত করলেন যে, সিরিয়ার সফর স্থগিত করে আপনার মদিনায় প্রত্যাবর্তন করা উচিত। আপনি আপনার সঙ্গীদের মহামারি প্লেগের দিকে ঠেলে দেবেন না।

উমর (রা.) প্রবীণ কুরাইশদের মতামত গ্রহণ করে সিরিয়া সফর স্থগিত করে মদিনায় ফিরে গেলেন। খলিফার মদিনায় ফেরত যাওয়া দেখে সেনাপতি আবু উবায়দা (রা.) বললেন, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আপনি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তকদির থেকে পলায়ন করে ফিরে যাচ্ছেন?’

উমর রা. বললেন, ‘আবু উবায়দাহ! আমরা আল্লাহর এক তকদির থেকে আরেক তকদিরের দিকে ফিরে যাচ্ছি।’

উমর (রা.) সেনাপতি আবু উবায়দাকে এ কথা বুঝাতে একটি উদাহরণ পেশ করলেন। তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, তোমার কিছু উটকে তুমি এমন কোনো উপত্যকায় নিয়ে গেলে যেখানে দুটি মাঠ আছে। মাঠ দুটির মধ্যে একটি সবুজ শ্যামলে ভরপুর। অন্যটি একেবারে শুষ্ক ও ধূসর। এখানে উট চরানো নিয়ে বিষয়টি কী এমন নয় যে, তুমি যদি সবুজ-শ্যামল মাঠে উট চরাও তা আল্লাহর নির্ধারিত তকদির অনুযায়ীই চরিয়েছ; আর যদি শুষ্ক মাঠে চরাও, তা-ও আল্লাহর তকদির অনুযায়ীই চরিয়েছ?

সে সময় সাহাবি আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেন। যে হাদিসে আবু উবায়দার জিজ্ঞাসার পরিপূর্ণ সমাধান ওঠে এসেছে।

আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন কোনো এলাকায় মহামারি প্লেগের বিস্তারের কথা শুনো, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে পালিয়েও যেও না।’ [সহিহ বুখারি]

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় নির্ধারণে এ ঘটনাটি আমাদের দিক নির্দেশনা প্রদান করে। এর সারকথা হলো, মহামারি আক্রান্ত এলাকায় না যাওয়া, আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যাবতীয় সতর্কতা গ্রহণ করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবধরনের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করুন।

এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা