ঢাবি শিক্ষার্থীদের ‘সংকটকালীন বৃত্তি’ দিচ্ছে ডিইউডিএস

দেশের স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লখযোগ্য। দেশের যেকোনো দুর্যোগ কিংবা ক্রান্তিলগ্নে সবসময় এগিয়ে আসে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সবসময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একজন শিক্ষার্থীর সমস্যা কিংবা অধিকার আদায়ে সবসময় ঐক্যবদ্ধ এই শিক্ষার্থীরা। এখানে পড়াশোনা করা অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই মধ্যবিত্ত কিংবা গ্রাম থেকে বড় হওয়া নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে গড়ে উঠা মেধাবী শিক্ষার্থী।


বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর অনেক শিক্ষার্থীই টিউশন করিয়ে কিংবা আশেপাশে ছোট কোনো কাজ করে নিজে চলে এমনকি পরিবারকেও আংশিক সাহায্য করার চেষ্টা করে। মাসের শুরুর সময় বেশীরভাগ শিক্ষার্থী টিউশনির টাকা পেয়ে নিজে পুরো মাস চলতো এবং পরিবারের খরচও দেয়ার চেষ্টা করতো কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯ প্যানডেমিক) প্রকোপে তাদের এই আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে অনেকেই নিজে এবং পরিবার নিয়ে পড়েছেন সংকটে।


দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে “ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি (ডিইউডিএস)” এসব শিক্ষার্থীদের তারা সাময়িক কিছু আর্থিক সহায়তা “সংকটকালীন বৃত্তি” দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঐ শিক্ষার্থী আবার সেই টাকা চাইলে ফেরত দিতে পারবে আর সক্ষম না হলে ফেরত দিতে হবে না। শিক্ষার্থী চাইলে এ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে। উদ্যোগ ও সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে এসব তথ্য জানান ডিইউডিএসে’র সভাপতি অাব্দুল্লাহ অাল ফয়সাল।


উদ্যোগের বিষয়ে ডিইউডিএস সভাপতি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি (ডিইউডিএস) দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়ানোকে তাদের নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করে এই উদ্যোগটি হাতে নিয়েছে।’


‘কিভাবে উদ্যোগটির প্রারম্ভিকতা হয়’ সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা গত ৩ এপ্রিল থেকে এই উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আমাদের সাবেকদের সাথে গত কয়েকদিন আগে এই বিষয়ে কথা হওয়ার পর আমরা চিন্তা করতে শুরু করি এ বিষয়ে। সে লক্ষ্যে পরবর্তীতে আমরা টাকা উঠাতে শুরু করি। প্রথমে আমরা চিন্তা করেছিলাম যে যেহেতু আমরা দেশের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি তাই আমাদের সদস্যদের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে অসহায় মানুষদের মাঝে খাবার পৌঁছে দিব। পরে দেখলাম যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই অনেক শিক্ষার্থী কষ্টে আছে। তাই তাদেরকেই সাহায্য করা বেশি প্রয়োজন। তারপরই আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে আমরা বাইরে সাহায্য না করে আমাদের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করবো। যা এককালীন একটা সাহায্য হবে, যাকে আমরা “সংকটকালীন বৃত্তি” বলছি।’


‘কারা এই বৃত্তি পাবে এবং এটার পুরো কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হবে’ সে বিষয়ে ফয়সাল বলেন, ‘যারা প্রতিমাসে নিজেদের টিউশনির টাকায় চলে কিংবা নিজের পরিবারকে সাহায্য করে তাদের সাহায্যের লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। সেই লক্ষ্যে আমরা অনলাইনে আবেদনও সংগ্রহ করছি গত তিনদিনে প্রায় ১৩০টির মতো আবেদন আমাদের কাছে জমা পড়েছে। এদের মধ্যে যাদের সমস্যাকে আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে/ হচ্ছে তাদের যাচাই বাছাই করে ৪৩ জনকে টাকা প্রদান করেছি। যার পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার ৩৫৫টাকা। বাকিদেরকেও যাচাই বাছাই করে আমরা সাহায্য দিব। যারা আবেদন করেছে তাদের তথ্য আমি (সভাপতি), সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহিদ হোসেন, ও চিফ মডারেটর ব্যাতিত আর কাউকে জানানো হচ্ছে না।’


‘টাকাটা কি ফেরতযোগ্য নাকি একেবারেই দিয়ে দেয়া হবে’ এমন প্রশ্নের জবাবে ডিইউডিএস সভাপতি বলেন, ‘আমরা এই টাকা সাহায্যের উদ্দেশ্য দিচ্ছি। এদের মধ্যে যাদের অবস্থা একেবারেই খারাপ তাদের টাকাটা আমরা নিব না। মূলত যারা টাকা ফেরত দিতে ইচ্ছুক তারা দিতে পারবে এবং বাকি যারা অপারগ তাদেরকে টাকা দিতে হবে না এরকমই ভাবছি৷’


এই কার্যক্রম কতদিন চলবে এমন প্রশ্নের উত্তরে সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, ‘এটা আসলে আমরা সংকটকালীন পুরো সময়ে জুড়েই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো। আমরা আমাদের সাবেকদের থেকে সহযোগিতা নিচ্ছি যদি তাদের ফান্ড শেষ হয়ে যায় তাহলে বর্তমানে আমরা যারা সংগঠনের সাথে যুক্ত রয়েছি তাদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে তা দিয়ে অস্বচ্ছল এই শিক্ষার্থীদের পাশে আমাদের অবস্থান চলমান রাখবো৷ আশাকরি যিনি এমন সংকটে ভুগছেন, তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে বিন্দুমাত্র সংকোচবোধ করবে না।’

এফএস/এমএইচ/বাংলাবাবার্তা