ছাত্রজীবনে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার চর্চা

মো. আরফাত উদ্দিন মামুন
 
 
আমি আজকে কথা বলবো ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে। যার বাংলা অর্থ হচ্ছে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা। এই ধারণাটির জনক বলা হয় ড্যানিয়েল গোলম্যানকে। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বুঝতে হলে আগে আপনাকে আবেগ কি এবং বুদ্ধিমত্তা কি এই দুইটা জিনিস ক্লিয়ারলি বুঝতে হবে।
 
আবেগ: আবেগ হলো একটি অনুভূতি যেমন রাগ, ভালোবাসা, ঘৃণা,সুখ এবং ভয়। যা কোন পরিস্থিতিতে আপনার কিংবা আপনার সাথে থাকা লোকজনের কারণে প্রকাশ পায়।
 
বুদ্ধিমত্তা: কোন কিছু দ্রুত বুঝা এবং সঠিক উপায়ে বিচার বিশ্লেষণ করে মতামত দেওয়ার ক্ষমতাকে বুদ্ধিমত্তা বলে।
 
এইবার আসি আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা জিনিসটা আসলে কি!সংক্ষেপে বলতে গেলে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে নিজের এবং অন্যের আবেগকে বুঝা,ম্যানেজ করা সর্বোপরি অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা।
 
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
 
হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের এক গবেষণায় বলেছে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা আইকিউ কিংবা কারিগরি দক্ষতার চেয়েও প্রফেশনাল লাইফে দ্বিগুণ বেশি প্রভাব বিস্তার করে।অর্থাৎ সফলতার পিছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা।
 
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা চর্চা করবো কিভাবে?
 
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা চর্চা করার ৪ কৌশলঃ
 
নিজের আবেগকে চেনা: পল একম্যান এর তথ্য অনুযায়ী মানুষের মধ্যে প্রধানত ৫ ধরণের আবেগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যেমন আনন্দ,রাগ,ভয়,ঘৃণা এবং দুঃখ।এই ৫ টি আবেগ নিজেকে কেন্দ্র করে বুঝার চেষ্টা করা।যেমন ধরুন মাঝেমধ্যে আপনার খুব রাগ হয় সেক্ষেত্রে আপনার উচিৎ রাগ কেন হয়,রাগ হওয়ার কারণ বুঝার চেষ্টা করা।রাগ হলে সেটার প্রকাশভঙ্গী কিরকম হয় সবকিছু নিজে নিজে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা।
 
নিজের আবেগকে ম্যানেজ করা: যদি আপনি নিজের আবেগ সম্পর্কে সচেতন হন তারপর যে বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা।ধরুন আপনি আপনার ডিপার্টমেন্টের একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করেন মানে ভালোবাসেন।প্রতিদিনই মেয়েটার সাথে কথা বলার জন্য ডিপার্টমেন্টের করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকেন।অনেকবার চেষ্টা করেও মেয়েটার সাথে কথা বলতে ব্যর্থ হলেন।কথা বলতে না পেরে এখন আপনার খুব রাগ হচ্ছে,রাগ সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে মেয়েটাকে যাচ্ছেতাই অপমান করে বসলেন।পরবর্তী ফলাফল কি হবে জানেন?আপনার সাথে মেয়েটার রিলেশন হওয়ার যতটুকু চান্স ছিল সেটা এখন জিরোতে কিংবা মাইনাসে গিয়ে পৌঁছেছে।তারপর মেয়েটা যদি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানকে অভিযোগ করে সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান আপনার বিরুদ্ধে একাডেমিক একশনে যাবে যা পুরো ডিপার্টমেন্টে জানাজানি হলে আপনার সম্পর্কে সবার একটা নেতিবাচক ধারণার জন্ম হবে। রাগ দেখাইতে গিয়ে লাভ তো কিছু হয়নি উল্টা আপনি ব্যক্তিগত জীবনে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ছেন।কিন্তু আপনি যদি শুরুতে আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন তাহলে আপনি আজ এত্ত ক্ষতির সম্মুখীন হতেন না,উল্টা মেয়েটার সাথে আপনার রিলেশন না হলেও অন্তত ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ হত যা ফিউচারে রিলেশন পর্যন্ত গড়াতে পারতো।
 
অন্যের আবেগকে বুঝা: শুধু নিজের আবেগকে বুঝলে হবেনা সাথে অন্যের আবেগকেও বুঝতে হবে।কারণ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে হলে অন্যদেরকে সাথে নিয়েই চলতে হবে।সমাজবিজ্ঞানে একটা কথা প্রচলিত আছে মানুষ অন্যের সাহায্য ছাড়া এক মুহূর্তও চলতে পারেনা।সবসময় একজন মানুষের অন্যের সাহায্য প্রয়োজন হয়।অন্যের সাহায্য নিতে হলে কিংবা অন্যকে সাহায্য করতে হলে অন্যের আবেগকেও বুঝতে হবে।ধরুন আপনার গার্লফ্রেন্ড কোন এক কারণে রেগে আপনাকে কয়েকটা কথা শুনাইছে এমনকি রেগে এটাও বলেছে আপনার সাথে উনি আর রিলেশন কন্টিনিউ করতে চাচ্ছেন না।এখন আপনিও যদি উনার মতো রেগে গিয়ে উলুটপালুট বলতে থাকেন তাইলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে যা দুইজনের জন্যই বিপদ পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।সেক্ষেত্রে আপনার উচিৎ হবে আপনার গার্লফ্রেন্ড ঠিক কি কারণে রেগে এইসব কথা বলেছে তা বুঝার চেষ্টা করা।রাগ করার পিছনে আপনার কোন ত্রুটি আছে কিনা সেটারও অনুসন্ধান করার চেষ্টা করা।অর্থাৎ এই কৌশলে সফল হতে হলে অন্যের জায়গায় নিজেকে বসিয়ে বিচার করতে হবে।
 
অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা: আপনি যদি ঠিকঠাক অন্যের আবেগকে বুঝতে পারেন তাইলে যে কারো সাথেই সহজে আপনার আর অন্যের মধ্যে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে।যেটা ব্যক্তিগত কিংবা প্রফেশনাল লাইফে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।বলা যায় অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করার জন্যই মূলত আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা শুরু থেকেই চর্চা করা হয়।
 
শেষকথা: আপনারা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা চর্চার কৌশলের ক্ষেত্রে খেয়াল করলেই দেখবেন প্রথম দুইটা কৌশল ছিল সম্পূর্ণ আত্মকেন্দ্রিক বাকি দুইটা কৌশল ছিল অন্যকে কেন্দ্র করে।উপরে উল্লেখিত কৌশল সমূহ প্রয়োগ করে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা চর্চা করবেন এই কামনায় করছি।
 
লেখক: শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এসএস/এমএইচ/বাংলাবার্তা