ঘুড়িপ্রেমিক নবী হোসেন

শাহরিয়ার নাসের


বৈশাখের একটি অলস বিকেল। সেই সাথে মৃদু বাতাস। বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে একাকী হাঁটছি। হঠাৎ চোখ পড়ল কয়েকজন ঘুড়িপ্রেমিকের দিকে। ঘুড়ি আমার খুব পছন্দের। তাই কৌতূহলবশত গেলাম তাদের কাছে। কাছে গিয়ে তরুণ ঘুড়িপ্রেমিকের পাশাপাশি পঞ্চাশোর্ধ একজন ঘুড়িপ্রেমিকের দেখা পেয়ে অনেকটাই অবাক হলাম। কথা বললাম পঞ্চাশোর্ধ ঘুড়ি প্রেমিক মো. নবী হোসেনের সঙ্গে। জানলাম তার ঘুড়ির প্রতি ভালোবাসার সব গল্প। জানলাম তার জীবনের গল্প।

পঞ্চাশোর্ধ নবী হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায়। একসময় এলাকায় রিক্সা চালাতেন। কয়েক বছর আগের কথা। অভাবের তাড়নায় পরিবার নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। সেখানে গিয়ে পরিবার নিয়ে টানা কয়েকবছর থাকেন। তারপর আবার নিজ গ্রামে চলে আসেন। এখনও তার আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। গ্রামে এখন রোজভিত্তিক কিংবা চুক্তিভিত্তিক অন্যের কাজ করেন। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সবাই বিবাহিত।

এমনকি তার নাতী নাতনিও আছে। দারিদ্র্যতার কারণে পড়াশোনা করতে পারেননি। ছেলেমেয়েদেরকেও তেমন পড়াশোনা করাতে পারেননি। তবে আর্থিক অসচ্ছলতা তাকে তার নেশা থেকে দূরে সরাতে পারেনি। ঘুড়ির প্রতি তার যে নেশা ছোটবেলা থেকে তা এখনও কাটেনি। ছোটবেলা থেকেই তিনি ঘুড়ি উড়ান।বানাতে পারেন কয়েক প্রকারের ঘুড়ি। তাদের মধ্যে রয়েছে তেলেঙ্গা, কোমর কাটা, ঝাপসহ আরো কয়েক প্রকারের ঘুড়ি। অনেককে ঘুড়ি বানিয়েও দেন তিনি।


নিজের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে নবী হোসেন বলেন, এলাকায় রিক্সা চালাতাম। দারিদ্র্যতার কারণে কয়েকবছর আগে পরিবার নিয়ে ঢাকায় যাই। সেখানে আমি রিক্সা চালাতাম, ছেলেমেয়েরা গার্মেন্টসে কাজ করতো। কয়েকবছর থেকে আবার চলে এসেছি। ছেলেমেয়েদের বিয়ের কাজ শেষ।এখন আর রিক্সা চালাতে পারিনা। এখন এলাকায় রোজভিত্তিক বা চুক্তিভিত্তিক কাজ করি। দেশের অবস্থা খুব খারাপ। করোনা ভাইরাসের কারণে কাজ নেই। কোথাও যেতেও পারছিনা। তাই প্রতিদিন বিকেলে মনের সুখেই ঘুড়ি উড়াই। এটা আমার ছোটবেলার নেশা। অনেকেই বলে এত বছর বয়সে কেউ ঘুড়ি উড়াই নি? আমি তাদের বলি ঘুড়ি উড়াতে বয়স লাগেনা। ঘুড়ি উড়ানো যাদের নেশা তারা সব বয়সেই উড়ায়।

এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা