করোনায় মৃত্যু, তবুও সন্তানের লাশ আগলে রাখা মানুষটা একজন বাবা

তাসনিম হাসান

হৃদয় মোচড়ানো ছবিটা ঘুরছে সর্বত্র। করোনার খরস্রোতে ভেসে যাওয়া সন্তানের কফিনবন্দী দেহ বুকে জড়িয়ে অন্তিমযাত্রার পথে এগোচ্ছেন বাবা। দূর থেকে ছবিটি তোলা। তাই হয়তো চোখের জলটা স্পষ্ট নয়। অব্যক্ত যন্ত্রণায় চলে যাওয়া বাচ্চাটার মৃত্যুশোকের সঙ্গে মিলেমিশে এই ছবিটাও সবার কান্নায় ভাগ বসিয়েছে।


করোনা এমনই দুর্মর যে মুহূর্তেই তার মারনঘাতি বংশবিস্তার ছড়াতে পারে। আক্রান্তরা তাই এক লহমায় হয়ে পড়ছেন নিঃসঙ্গ। তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে হাসপাতালে আসতে হচ্ছে একা, হাসপাতালের বেডেও স্বজনহীন। এমনকি মৃত্যুর সময়ও সম্পূর্ণ একাকি।
শেষ মুহূর্তে হাত দুটো মুঠোয় ভরে একটু সাহস জোগাবেন-এমনও কেউ থাকছে না পাশে।
কপালে স্নেহের চুম্বণে যন্ত্রণাটুকু ভাগ করে নেবেন-এমনও কেউ থাকছে না পাশে।
বোঝাতে না পারা হাহাকার নিয়ে যে চলে যাচ্ছে পরলোকের পথে তার শুকনো গলাটা একটু মিষ্টি পানিতে ভিজিয়ে দেবেন-এমনও কেউ থাকছে না পাশে।


সারাজীবনের জন্য নিমীলিত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা ফ্যালফ্যাল চোখের দিকে তাকিয়ে দুফোটা চোখের জল ফেলবেন এমনও কেউ থাকছে না পাশে। স্বজনের কাঁদে চড়ে পরলোকের পথে হেঁটে যাবেন সেই সৌভাগ্যও আজ উধাও। যেন পালিয়ে কোনোভাবে ওপারে চলে যেতে পারলেই বেঁচে যায় লাশটা।


পুরো বিশ্বজুড়েই একই ছবি। কারণ, যাদের পাশে থাকার কথা ছিল-তাঁরাও যে ঘরে বন্দী। ভয়ার্ত মননে নিত্য শুনে চলেছেন নিজের মৃত্যুডাক। এমন অকল্পনীয় পরিস্থিতিতে নিজের জীবন ‘বিপন্ন জেনেও’ সন্তানের নিথর দেহকে আগলে রাখা এই বাবাকে ভালো না বেসে উপায় আছে?


নিশ্চয় স্বর্গবাসী ছেলেটাও এতক্ষণে সৃষ্টিকর্তার কাছে দাবি তুলে বসেছে-‘যত পাপই থাকুক, মৃত্যুর পরে বাবাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও।’ তাইতো-ছবিটা দেখার পর থেকে আমার মনে ক্লান্তিহীনভাবে বেজে চলেছে হুমায়ুন আহমেদের বিখ্যাত সেই উক্তি-‘পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু একজনও খারাপ বাবা নেই।’
উক্তিটা এতদিনে বুঝি পূর্ণতা পেল…

লেখক: , স্টাফ রিপোর্টার দৈনিক প্রথম আলো, সাবেক সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি

এসএস/এমএইচ/বাংলাবার্তা