করোনার রহস্য জানাল কলকাতার চার গবেষক


আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বিশ্ব থমকে আছে আজব জীবাণু করোনার থাবায়। ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন আবহাওয়ায় বারবার চরিত্র বদল করায় এই ভয়ংকর ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে বেড়ে চলছে মৃতের সংখ্যা।


চীনের উহান শহরে উদ্ভব হলেও বিশ্বের ২০৯টি দেশ ও অঞ্চলে একযোগে তাণ্ডব চালাচ্ছে এই করোনাভাইরাস। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ১৭ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এই ভাইরাসে। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখেরও বেশি মানুষের।


মৃত্যুর মিছিল থামাতে প্রাণপণ লড়ছেন ডাক্তার ও গবেষকরা। কিন্তু ক্রমাগত জিন বা চরিত্র বদলে ফেলায় শ্রম বৃথা যাচ্ছে তাদের। তবে এবার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রথম পথ বলে দিলেন কলকাতার চার গবেষক। এমনটি জানিয়েছে ভারতের কলকাতা টাইমস।


করোনাভাইরাসের আণবিক রহস্য এবং বিভিন্ন দেশে বা ভৌগলিক অবস্থানের পার্থক্যে ভাইরাসের ভিন্নরূপে বিবর্তনের রহস্য অনেকটাই উন্মোচিত করে ফেলেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন গবেষকের এই টিম। প্রি-প্রিন্ট অবস্থায় তাদের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে জীববিদ্যা বিষয়ক গবেষণার বিশিষ্ট সংগ্রহশালা ‘বায়ো আর্কাইভ’এ। এই গবেষণাপত্রের নাম, ‘ডিকোডিং দ্য লেথাল ইফেক্ট অব সার্স-কভ-২ (নভেল করোনাভাইরাস) স্ট্রেইনস ফ্রম গ্লোবাল পার্সপেক্টিভ: মলিকুলার প্যাথোজেনেসিস অ্যান্ড এভোলিউশনারি দিভার্জেন্স।’


গবেষণাপত্রটির প্রধান গবেষক হলেন শুভম ব্যানার্জি। এই গবেষকের সঙ্গে কাজ করেছেন পৃথা ভট্টাচার্য, শিরিঞ্জনা ধর ও সন্দীপ ভট্টাচার্য।
শুভম ব্যানার্জি বলেন, আমরা দেখেছি যে করোনাভাইরাসের চার থেকে পাঁচটি ‘স্ট্রেন’ রয়েছে। যদিও চীন জানিয়েছিল দুইটির কথা। কিন্তু তখন তাদের দেশেই শুধু ঘোরাফেরা করছিল এই ভাইরাস। সেই অনুযায়ী তাদের তথ্যটি সঠিক। কিন্তু বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে আমরা গবেষণা শুরু করি। খুঁজে পাই চার-পাঁচ ধরনের স্ট্রেন।


তিনি বলেন, আমরা গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছি, বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটির বিভিন্ন চরিত্র। সেগুলোকে ভাগ করে দেখা যাচ্ছে, ইতালি, স্পেন, আমেরিকায় এর মৃত্যুহার সবথেকে বেশি, শতকরায় ১৪ ভাগ। অর্থাত্‍ ওইসব দেশে এটি সব থেকে শক্তিশালী। চীন-জাপান এইসব দেশে এর শক্তি কম, ৬-৮ শতাংশ। আবার ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল, নেপাল, ভিয়েতনামে এর মারণ ক্ষমতা সব থেকে কম, ২-২.৫ শতাংশ।


তাদের গবেষণা থেকে জানা গেছে, কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার নির্ভর করছে মূলত তিনটি বিষয়ের উপর। ‘মিউটেশন’ এর সংখ্যা, ‘রেয়ারিটি অব দ্য অ্যালেয়িক ভেরিয়েশন’ আর ‘ফাংশনাল কনসিকোয়েন্স অব দ্য মিউটেশন অ্যাট প্রোটিন লেভেল’।

এরপরে তারা এই তিন ধরনের কোভিড১৯-এর মিউটেশন নিয়ে গবেষণা করেন। সেই গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছেন, চীনে বা তার আশেপাশে যে মিউটেশন ছিল ভাইরাসের তা ‘সি’ টু ‘টি’। ইতালি, স্পেন বা আমেরিকায় এর মিউটেশন ‘এ’ টু ‘টি’, ‘জি’ টু ‘এ’, ‘টি’ টু ‘এ’। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল, নেপাল, ভিয়েতনামের মতো দেশে যেখানে মারণ ক্ষমতা কম সেখানে এই ভাইরাসের মূলত দুটি মিউটেশন রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ‘ডিলিটেশন মিউটেশন’ ও ‘নন-সিনোনিমস মিউটেশন’।


শুভম ব্যানার্জি জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন চরিত্র যে ধারণ করছে এই ভাইরাস তার মিউটেশনগুলো হলো উপরের পয়েন্টভিত্তিক অংশ। এর থেকেই স্পষ্ট তিন ধরনের মৃত্যু হার বিশিষ্ট দেশে তিন ধরনের ভ্যাকসিন লাগবে। যেটা ইতালিতে কাজ করবে সেটা চীনে কাজ করবে না। আবার যেটা চীনে কাজ করবে সেটা ভারতে কাজ করবে না। কিন্তু ভারতে যেটা কাজ করবে সেটা অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনামে কাজ করবে। ইতালির ভ্যাকসিন কাজ করবে আমেরিকায়।


তিনি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে কাজ হচ্ছে কিন্তু এই প্রাথমিক বিষয়টা এখনও কেউ বলেনি। আমাদের গবেষণা সেই পথ দেখিয়েছে। আমরা এখন এর প্রোটিন স্ট্রাকচার নিয়ে কাজ করছি। এরপরে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাব। তবে যেহেতু আমরা প্রথম ধাপ দেখিয়ে দিয়েছি। তা প্রকাশিত হয়েছে‘বায়ো আর্কাইভে’, সেখানে ১৪২টি দেশের বিজ্ঞানীরা রয়েছেন। এবার আমাদের মনে হয় এটা দেখে নেওয়ার পর আমাদের থেকে আরো দ্রুত কাজ করবে উন্নত দেশের বিজ্ঞানীরা। আশা করছি এই গবেষণা দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করতে সাহায্য করবে।

এফএস/এমএইচ/বাংলাবার্তা