নোবিপ্রবির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ১৫ জুলাই, জন্মদিন ২২ জুন ‘দিবস নিয়ে যত বিভ্রান্তি’

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
মো. ফাহাদ হোসেন হৃদয়:
দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ২০০৬ সালে নোয়াখালীতে প্রতিষ্ঠা করা হয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)। সে বছর ২২ জুন ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষের ১৮০ জন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ২৭ তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে নোবিপ্রবি
 
বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) দিবস প্রত্যক্ষ করলে দেখা যায় তাদের সবাই শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দিনটিকেই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে। একই কারণে ২২ জুনকেই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পালন করা হয়।
 
কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আসলে এ নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
 
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন সংক্রান্ত তথ্য থেকে দেখা যায় প্রাক্তন উপাচার্য এ কে এম সাঈদুল হক চৌধুরীর সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবার অত্যন্ত আড়ম্বর আয়োজনের মাধ্যমে পুরো নোয়াখালী জুড়ে এই দিবসটি পালিত হয়। ২০১৫ সালে নোবিপ্রবির ৪র্থ ভিসি অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান স্যার দায়িত্বে এলে তিনিও প্রথমবার ২২জুনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্তের কারণে ১৫ জুলাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবস ঘোষণা করা হয় বলে জানা গেছে। বর্তমানেও সেটি বহাল রয়েছে।
 
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন তথ্য হতে দেখা যায়, ১৯৯৮ সালে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের ১২টি জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যার মধ্যে নোবিপ্রবিও অন্তর্ভুক্ত ছিলো। পরবর্তীতে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই “নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১” পাশ হয়, ২০০৩ সালের ২৫ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সেই আইন কার্যকর হয় এবং ২০০৫ সালের ২৪ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
 
দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালনের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনটিই আইন পাশের দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে না। উপরন্তু সবক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনাকেই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে।
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালে ২২ জুন শুরু হয়েছিল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। ২২ জুনকে নোবিপ্রবি দিবস হিসেবেই পালন করা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৬ সালে তৎকালীন ভিসি ড. অহিদুজ্জামান আইন পাশ করলেন, এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ১৫ জুলাই। কারণ বা যুক্তি হিসেবে জানালেন, ২০০১ সালের ১৫ জুলাই সংসদে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন পাশ হয়। অর্থাৎ, ২০০১ সালের ১৫ জুলাই যদি সংসদে এই আইন পাশ না হত তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হত না। তাই ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। কিন্তু প্রশ্ন এসেছিল তাহলে ২২জুন? তিনি বললেন, ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় জন্মদিন।
 
এই ঘটনা নেপথ্যে কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ড. অহিদুজ্জামান নোবিপ্রবিতে ভিসি হিসেবে যোগ দেন ২০১৫ সালে। ওই বছর ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও বিশ্ববিদ্যালয় জন্মদিন একই ছিল এবং পালন হয়েছে। কিন্তু ওই দিবসে অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি তারেক রাশেদ উদ্দিন বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, আমি অনুরোধ করব বর্তমান ভিসিকে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক সংসদে আইন পাশের (২০০১ সাল ১৫ জুলাই) দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস করা হোক।”
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, একজন নোবিপ্রবিয়ান হিসেবে বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার যে, বিভিন্ন অন্যায় এবং অসঙ্গতিতে আমরা কথা বললেও নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে তার কোন প্রতিবাদ আমরা করছি না। যেখানে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার দিনে পালন করা হয় সেখানে আমরা একটি মহলের ষড়যন্ত্রের কুটকৌশলকে স্বীকৃতি দিচ্ছি। ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা আমাদের দেশ স্বাধীনের পরেও অনেকবার দেখা গিয়েছে।
 
এই বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিদার-উল-আলম বলেন, আগের বছরে পালিত তারিখে এবারও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হবে। তবে যেহেতু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর দিনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হয়। আমরাও নির্দিষ্ট সভায় এটা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।
 

এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা