যুদ্ধে বীরত্ব দেখিয়ে জায়গা পান পুলিশে, অথচ বৃদ্ধ বয়সে মুক্তিযোদ্ধার সনদটাও পাচ্ছেন না

সোহরাব সাহল:
 
নজরুল ইসলাম মল্লিকের বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই। পুলিশে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকার পর এখন অবসরে । মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের কারণে ১৯৭২ সালে তার চাকরি হয় পুলিশ বিভাগে। অবসরে গিয়ে তার দরকার হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সনদের। কিন্তু মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সে স্বীকৃতির জন্য। শত ঘুরাঘুরির পর এখনো হাতে পাননি সে সনদ। গেজেটেও নেই তার নাম।
 
জানা যায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণ করেন তিনি। বাগেরহাট জেলার বিষ্ণুপুর কোড়ামারা গ্রামের বারিক মল্লিকের পুত্র নজরুল ইসলাম মল্লিক ১৯৭১ সালের ১৮ বছরের টগবেগে যুবক। তখন স্থানীয় চিরুলিয়া মাধ্যামিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্র তিনি। তিনি ছিলেন একজন সম্মুখ যোদ্ধা।
 
নজরুল বলেন, পায়ে হেঁটে ভারত গিয়ে প্রশিক্ষন শেষে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করি। ৯ নং সেক্টর কমান্ডার অবসর প্রাপ্ত মরহুম এম এ জলিল এবং তাইজুল ইসলামের নেতৃত্বে নাজিরপুর, গজালিয়া , কার্তিকদিয়া, রঘুনাথপুর, যাত্রাপুর, পানিঘাট, বাবুরহাট, হালিশহরসহ দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সরাসরি অংশগ্রহন করি।
 
তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শেষে আমার ব্যবহৃত হাতিয়ার নাইকো মেশিনগান এল এম জি বাগেরহাট পিসি কলেজ ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার জমা দেই। সেময় খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ১২ কে এল এমজির ম্যাগজিনের ৬০ রাউন্ড গুলিও জমা দেই। হাতিয়ার জমা নেয়া সরকারি রেজিষ্ট্রারে সব রেকর্ড আছে। যুদ্ধে আমার বীরত্ব দেখে আমাকে পুলিশ বিভাগে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বাগেরহাট ম্যালিশিয়া ক্যাম্পে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭২সালের ৪মার্চ আমাকে ম্যালিশিয়া ক্যাম্প থেকে বাগেরহাট নুরুল আমিন হাইস্কুল মাঠে নেয়া হয়। সেখানে ৩শ মুক্তিযোদ্ধা থেকে বাছাই করে আমাকেসহ মোট ৩৯জনকে পুলিশে চাকরি দেয়া হয়। তখন মুক্তিযোদ্ধা সনদ ঢাকা থেকে না যাওয়ার কারনে আমাদের মাঝ বিতরণ হয়নি।
 
নজরুল মল্লিক বলেন, পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমাদের ম্যালিশা ইউনিটের কোন সনদ পাওয়া যাচ্ছেনা। পুলিশের চাকরি করার কারনে আমাকে অনেক স্থানে বদলি হতে হয়েছে। যারা কারনে পরবর্তীতে যখন তালিকা করা হয় আমি গ্রেজেটভুক্ত হওয়ার খবর পাইনি। কারন আমি যুদ্ধ করেছি দেশের জন্য । আমার বিশ্বাস ছিল মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য আমাকে কোন জটিলতায় পড়তে হবে না।

এসএস/এমএইচ/বাংলাবার্তা