চবির উপ-উপাচার্য পদে আলোচনায় শাহাদাত হোসেন

849
ড.শাহাদাত হোসেন

চবি প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন উপ-উপাচার্য পদে এগিয়ে আছেন। ২০০২ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানসেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা এই শিক্ষক বিভাগের প্রথম পূর্ন অধ্যাপক।

তিনি দীর্ঘ ১৪ বছর বিভাগে সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন এবং নানান গবেষণায় নিয়োজিত আছেন। তিনি ৬ বছর বিভাগের সভাপতি থাকাকালীন শিক্ষাদান পদ্ধতি, মানবসম্পদ ও অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

৮ বছরের বেশি সময় আইসিটি বিভাগের কোঅর্ডিনেটর দায়িত্ব পালনের সময় সর্বপ্রথম ক্যাম্পাস ব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির পরিকল্পনা ও উন্নয়নের রুপকল্প প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। শুধু তাই নয় চবিতে আইটি পার্ক স্থাপন করে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিণত করার রুপকার হিসেবে তাকে দেখা যায়। এরেই ফলশ্রুতিতে চবিতে প্রথম উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

শাহাদাত হোসেন আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত। তিনি বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ ও ফেরোশিপ অর্জন করেছেন। এরমধ্যে অন্যতম কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, ইউরোপিয়ান কমিশনড স্পন্সর্ড ইরাসমূহ মুন্ডুস ফেলোশিপ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ফেলোশিপ ও টিন্ডাল ফেলোশিপ অন্যতম।

বর্তমানে তিনি ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে সুইডেন, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত আছেন। এছাড়া তিনি ইউরোপিয়ান কমিশনড স্পন্সর্ড ইরাসমূহ মুন্ডুস যৌথ মাস্টার্স প্রোগ্রামের আওতায় স্কলার ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে ৫ বছর ধরে যুক্ত আছেন।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ছাত্রলীগ এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. ফিরোজ খানম ফারাজি জানান, শাহাদাত হোসেন ১৯৮৮-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বর্তমানে চুয়েট) ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে এক অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে নবীনদের পক্ষে বক্তব্যও দেন তিনি।

শুধু রাজনীতি নয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো ফলাফল করে হন চবিতে প্রভাষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রগতিশীল চর্চা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি কাজ করেন তিনি। চট্টগ্রামের মন্ত্রী, এমপিদের পক্ষে বিভিন্ন সময় প্রচারণায় ছিলেন সামনের সারিতে।

ছাত্রলীগের হয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন শাহাদাত হোসেন। এছাড়া ১৯৯১ সালে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের আক্রমণের শিকার হন তিনি। শাহাদাত হোসেনের বাবা একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তিনি চুয়েট ছাত্রলীগ এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের একজন সক্রিয় সদস্যও বলে জানান ফিরোজ খানম।

ড. শাহাদাত হোসেনের সহকর্মীরা জানান, তার বাবা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান (ওরফে মকছুদ চেয়ারম্যান) বৃহত্তর সাতকানিয়া থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। দীর্ঘ ৩০ বছর সাতকানিয়া সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরে আওয়ামী লীগের এক সময়ের সাধারণ সম্পাদক মরহুম আব্দুর রাজ্জাক এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মরহুম সালাউদ্দিন ইউসুফসহ অনেক নেতাকর্মী মাসুদুর রহমানের তৎকালীন গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বাবার আদর্শ ধারণ করে ছেলেও ছোটবেলা থেকে আওয়ামী লীগের ধ্যান-ধারণায় গড়ে উঠেন। ১৯৮৪ সালে ড. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন গ্রামে ‘অরুণোদয়ের সৈনিক’নামক একটি প্রগতিশীল সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলেন। তখন তিনি এসএসসি পাস করেন।

১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পক্ষে প্রফেসর হোসেন প্রতিষ্ঠিত ‘অরুণোদয়ের সৈনিক’সংগঠনটি সবচাইতে বড় জনসমাগম করে। এইচএসসি পাশ করার পর শাহাদাত হোসেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হন। সেখানে ১৯৮৮-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

সারাজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা এই শিক্ষক উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় সমান কৃতিত্ব রেখেছেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকরা তাকে উপ-উপাচার্য পদে দেখতে চান।

হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ বলেন, শাহাদাত হোসেন একজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমর্থক। তিনি ২০১৪ সালের ডিন নির্বাচনে হলুদ দলের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। এখনও তিনি হলুদ দলের সক্রিয় সদস্য। এছাড়া শিক্ষক হিসেবেও তিনি অসাধারণ।

শাহাদাত হোসেন বলেন, চুয়েট থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বের হয়ে চবির প্রভাষক হই। বিভাগের চেয়ারম্যান থাকাকালীন অনেক পরিবর্তন এনেছি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি। যেগুলো আন্তজার্তিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে সুইডেন, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত আছি। এছাড়া ইউরোপিয়ান কমিশনড স্পন্সর্ড ইরাসমূহ মুন্ডুস যৌথ মাস্টার্স প্রোগ্রামের আওতায় স্কলার ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে ৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি।

তিনি বলেন, সরকার দায়িত্ব দিলে, যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবো। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ও ডিজিটাল প্লাটফরমে নিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

এসএস/এফএম/বাংলাবার্তা