শাফায়েত আহমেদ:
উত্তর কাশ্মীরের বারামুলা জেলায় ‘আপেলের শহর’ সোপোর। পুলিশের দেয়া তথ্যমতে বুধবার পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের বন্দুকযুদ্ধ বাধে। সেখানে দুই পক্ষের যুদ্ধের মাঝে আটকা পরে বশির আহমেদ খান নামের ৬৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধ ও তার ৩ বছরের নাতী।
গুলির আঘাতে মারা যায় বৃদ্ধ। কোন রকমে প্রানে বেঁচে যায় নাতী। মৃত দাদার লাশের উপর বসে কাঁদতে থাকা শিশুর সেই ছবিটি ইন্টারনেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববাসীর সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত সরকার।
এদিকে ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একজন মুখপাত্র সমিত পাত্র মৃত বশিরের ছবি নিয়ে উপহাস করায় সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। তিনি ছবিটিতে টুইট করেছেন “পুলিৎজার প্রেমিক?”
সমিত পাত্রসহ বিজেপি নেতারা মূলত মে মাসে কাশ্মীরের তিন সাংবাদিককে পুলিৎজার পুরষ্কার প্রদানের সমালোচনা করেছিলেন ঐ টুইটে। তারা আরও দাবি করেন যে ছবিটি “ভারতবিরোধী”।
নিহত বশির আহমেদ খানের ভাই নাজির আহমেদ বলেন, “আমার ভাই জঙ্গি ছিল না। সে বন্দুক বহন করেনি। কেন তাকে হত্যা করা হয়েছিল?”
পুলিশ নিহতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে বিদ্রোহী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নাগরিক গাড়িটি ধরা পড়েছিল।
কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিদর্শক বিজয় কুমার সাংবাদিকদের বলেন, ” বুধবার বিদ্রোহীরা উত্তরের শহর সোপোরের একটি মসজিদ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল। ফলে সেখানে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন এবং তিনজন আহত হয়েছেন”।
যেভাবে পুলিশ বলছিল যে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে বশিরের গাড়ি চলে আসায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। সে কথাকে মিথ্যা প্রমান করে নিহতের ভাগনে আনাদোলু নিউজ এজেন্সিকে বলেন, নিহতের গাড়িতে গুলির একটা ছোট চিহ্নও পাওয়া যায়নি। নিহতের পুত্র সাহিন আহমেদ বলেন, তার বাবা যদি দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে গাড়ি নিয়ে আটকে পড়ে- তাহলে লাশ গাড়ির ভিতর থাকার কথা। কিন্তু তারা লাশ পেয়েছেন গাড়ির অনেক দূরে।ফলে বোঝায় যায় বশির আহমেদ খানের হত্যাকান্ড শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত।
নিহতের পরিবারের লোক দাবি করেছে যে পুলিশ তাকে হত্যা করে তার বুকের উপর নাতীকে বসিয়েছে ছবি তোলার জন্য ।
বেসরকারি সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে, এ বছর জানুয়ারীর পর থেকে কাশ্মীর জুড়ে ১০০’র বেশি সামরিক অভিযানের সময় কমপক্ষে ২২৯ জন মারা গিয়েছে।
কাশ্মীরে এ চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে জাতিসংঘের মহা সচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র দুজারিক বলেন, কাশ্মীরি নাগরিক ও ভারতীয় সৈন্য হত্যার জন্য যারা দায়ী। তাদের বিচারে আনার দরকার রয়েছে।
এসএস/এমএইচ/বাংলাবার্তা