Friday, July 11, 2025
Homeআন্তর্জাতিকসিরিয়া তুরস্কের সংঘাতে ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত, নেপথ্যে কি?

সিরিয়া তুরস্কের সংঘাতে ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত, নেপথ্যে কি?

ফাহিম আহমেদ সাফায়েত

২০১১ সালের কথা। তখন সিরিয়ার আকাশে জমতে থাকে গৃহ যুদ্ধের ঘন কালো মেঘ। সূর্যের সোনালী আভা মুছে যায় গৃহ যুদ্ধের সেই গোলা বারুদের ধোঁয়ায় । সেই ধোঁয়ার আধারে সিরিয়ার শান্তির সূর্য ডুবে গেছে হয়তো চিরতরে। তারপর আর সুবেহ-সাদিক হয়নি। এখনও অশান্তির আঁধারে সমগ্র সিরিয়া। আইএস ও ফ্রি-সিরিয়ান আর্মি দমন এবং মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হলে বিশ্ব ভেবে ছিল এই বুঝি সিরিয়াতে শান্তি ফিরবে। কিন্তু পরিস্থিতি মোড় নেয় অন্যদিকে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিলে তুরস্ক নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার নামে ডিসেম্বর থেকে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তুরস্কের অভিযান পরিচালনার কারন স্পষ্ট। ট্রাম্প প্রশাসন সিরিয়ায় কুর্দিদের ৩০ হাজার সেনা নিয়ে সিরিয়ার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তৈরী করার ঘোষণা দিলে তুরস্কের পক্ষ থেকে সিরিয়া অভিযান পরিচালনার হুমকি আসে।


তবে তুরস্কের সিরিয়া অভিযান পরিচালনা করার কারন বুঝতে হলে আগে বুঝতে হবে কুর্দি কারা। তাদের সাথে তুর্কী সরকারের কিসের বিরোধ। আগে জানা যাক কুর্দি কারা। কুর্দি হল কুর্দি ভাষায় কথা বলা সাড়ে তিন কিংবা চার কোটি জনগোষ্ঠীর একটি জাতি। যাদের আছে নিজস্ব সংস্কৃতি। তারা তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক,ইরান, আর্মেনিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে। তবে কুর্দিদের একটি বড় অংশ বাস করে তুরস্কে। এবার জানা যাক কুর্দিদের সাথে তুর্কী সরকারের বিরোধের কারণ কি?


কুর্দিরা মধ্য প্রাচ্যের চতুর্থ বৃহৎ নৃগোষ্ঠী অথচ তাদের নিজস্ব কোন দেশ নেই। বিভিন্ন দেশে বিচ্ছিন্ন ভাবে বসবাস করছে। ১ম বিশ্ব যুদ্ধে কুর্দিরা মিত্র শক্তিকে সমর্থন করে। উসমানী সম্রাজ্যের পতনের পর কুর্দিদের সাথে মিত্রশক্তির কুর্দিস্তান নামক স্বাধীন দেশ গঠনের চুক্তি হয় ১৯২০ সালে। কিন্তু ১৯২৪ সালে মিত্রশক্তির সাথে তুরস্কের লুজেন চুক্তি হলে তুরস্কের সীমানা নির্ধারিত হয়। ফলে কুর্দিদের একটি বড় অংশ আটকা পড়ে তুর্কী সীমান্তে। এরই মাধ্যমে কুর্দিদের স্বাধীনতার স্বপ্ন লোপ পায়।

তবে তারা ১৯৮০ সালে তুরস্কে পিকেকে নামক একটি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলে। তখন পিকেকের সাথে তুর্কী সরকারের সংঘাতে ৪০ হাজার লোক প্রাণ হারায়। ১৯৯৯ সাল থেকে পিকেকের স্বাধীনতাকামী নেতা আবদুল্লাহ ওকাজান কারারুদ্ধ আছে। কুর্দিদের ব্যাপক প্রাণহানীর পর তারা স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে সরে এসে স্বায়ত্তশাসনর জন্য গণতান্ত্রিকভাবে লড়াই করছে। তবে তুরস্কের পার্শ্ববর্তী দেশ সিরিয়ায় কুর্দিরা সশস্ত্র অবস্থায় আছে। তারা সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের ব্যাপক অঞ্চল দখল করে আছে। এমনকি তারা সেখানে প্রতিনিয়ত সিরিয়া সরকারের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে।

সিরিয়া থেকে আইএস বিতারনেও কুর্দিদের ভূমিকা ছিল ব্যাপক। তারা এখন সিরিয়ার অনেক এলাকা দখল করে আছে। বিশেষ করে ইদলিব, আফরিন ও মানবিজ এর মত বেশ কয়েকটি বড় বড় শহর তাদের দখলে। সিরিয়ার এই শহরগুলো তুর্কী সীমান্তে অবস্থিত তাই কুর্দিদের এই উত্থান ভাল চোখে দেখছে না তুর্কী সরকার।

এদিকে তুরস্ক ভাবছে- সিরিয়ার কুর্দিদের সমর্থনে ও অস্ত্র সরবরাহে তুরস্কে বসবাসকারী কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। আর তা তুরস্কের পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলতে পারে। তাই তুর্কী সরকার চায় তুরস্কের সীমান্ত থেকে সিরিয়ান কুর্দিদের সরিয়ে দিতে। তাই তারা নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার জন্য সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। তুর্কী সরকারের এক বিবৃতিতে জানানো হয় যে তারা সিরিয়ান শরনার্থীদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল তৈরী করে তাদের সেখানে স্থানান্তর করা হবে।

তবে তুরস্ক ও কুর্দি মিলিশিয়াদের এই যুদ্ধের মাত্রা ছাপিয়ে যায়- যখন এই যুদ্ধে বাশার আল আসাদের সরকারি বাহিনী যোগ দেয় । ইদলিবে সিরিয়ার ড্রোন হামলায় গত ২৭ফেব্রুয়ারি প্রাণ গেছে ৩৩ তুর্কী সেনার। পাল্টা হামলায় চার দিনে ২ হাজারের বেশি সিরিয়ান সেনার প্রাণ গেছে। তুর্কী যুদ্ধ মন্ত্রী হুনুশি আকার বলেছে,” সিরিয়া নমনীয় না হলে ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অপারেশন স্পিং শিল্ড চালিয়ে যাওয়া হবে। ”

এদিকে সিরিয়ার আকাশ পথে তুরস্কের বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সিরিয়ার পক্ষ থেকে। গেল দুই মাসের সংঘাতে সিরিয়ার ১০ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সংকট নিরাসনের জন্য জাতিসংঘ বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। তবু ও নিরাপদ অঞ্চল তৈরীর জন্য তুরস্ক তাদের অভিযান অব্যহত রেখেছে। দুই দেশের এই যুদ্ধময় পরিস্থিতিতে মার্কিন হস্তক্ষেপ সিরিয়ার গৃহ যুদ্ধের মত আবারো দীর্ঘকালের ভয়াবহ যুদ্ধে রুপ নিতে পারে। তাই এই যুদ্ধের শেষ কোথায় সেটা বলাও যে বেশ কঠিন।

এসএস/এমএইচ/বাংলাবার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments