তাহমিনা আহমেদ তন্নী
আমি নিশ্চিত এটা শুধু কঠিন সাহসী মায়েরাই বলতে পারেন।
আম্মা বললেন “শোন, অন্যকে সেবা দিতে গিয়ে তুই যদি মরেও যাস আমি কখনোই আফসোস করবো না। কিন্তু তুই যদি এই সময় অন্যের জন্য কিছু না করিস তাহলে সেটা আমার জন্য লজ্জাজনক হবে।
রাতে খেতে বসে আম্মাকে বললাম,”আম্মা ফ্রিজে লাউয়ের তরকারি আছে। ওটা গরম করে দাও।”
আম্মা “সেটা গতকালের তরকারি আজকে খেতে হবে না । আজকে যেগুলো রান্না করেছি সেগুলো খাও। এমনিতেই হোস্টেলে ঠিকমতো খেতে পারো না”
হাসতে হাসতে বললাম “আম্মা শোনো, এই যে করোনা মহামারির সময়ে দিনাজপুর ফিরে যাচ্ছি, যদি সংক্রমিত হয়ে মারা যাই, তাহলে সারাজীবন বলবা আহারে! মেয়েটা লাউ খেতে চেয়েছিলো কেন যে দিলাম না। এরপর আমার কথা মনে করে আর জীবনেও লাউ খেতে পারবা না।”
আব্বা আম্মার ট্রিটমেন্ট করানোর জন্য কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে বাসায় এসেছিলাম। আব্বা -আম্মা দুজনই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি সহ নানা রোগে আক্রান্ত। আপাতত কিছু কাজ গুছিয়ে ফিরে যাচ্ছি দিনাজপুরে।
করোনার এই ক্রিটিকাল সময়ে আমার ডিউটি চলছে মেডিসিন বিভাগে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী এবং তাদের এটেন্ডেন্টের ভীড়যুক্ত ওয়ার্ড বলে সব হাসপাতালের এই বিভাগের একটা বদনাম আছে। আব্বা-আম্মা স্বভাবতই আমাকে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন, কিন্তু সামনাসামনি যেভাবে সাহস দিচ্ছেন তাতে অবাক না হয়ে পারছি না।
দুজন অসুস্থ মানুষকে রেখে যাচ্ছি এই শহরে; রেখে যাচ্ছি সমস্ত স্মৃতি আর আমার ভালবাসা। কোনো প্রোটেকশন ছাড়া ডিউটি করার পর এই শহরে ফিরে আসতে পারবো কিনা জানি না। শুধু জানি সৃষ্টিকর্তার হাতে প্রিয় মানুষগুলোকে রেখে যাচ্ছি। তিনিই একমাত্র হেফাজতকারী।
লেখক: ইন্টার্ণ ডাক্তার, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ