টিউশনির টাকায় চলা অভিজিৎ আজ বশেমুরবিপ্রবির প্রথম বিসিএস ক্যাডার

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিবেদক:
 
দারিদ্র্যতা শিক্ষা জীবনের অন্যতম বাঁধা । কখনো কখনো এই বাঁধায় আটকে যায় হাজারো শিক্ষার্থীর বুকবাঁধা স্বপ্নগুলো । বন্ধ হয়ে যায় স্বপ্ন পূরণের সব রাস্তা। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয় । তাদের অদম্য ইচ্ছা আর অক্লান্ত পরিশ্রমের কাছে হার মানে সব বাঁধা । পৌঁছে যায় তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে ।
ঠিক তেমনি একজন জীবন যুদ্ধের সফল যোদ্ধা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থী অভিজিৎ ঢালী। তিনি বশেমুরবিপ্রবির ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থী । সদ্য প্রকাশিত ৩৮ তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) সুপারিশপ্রাপ্ত হন প্রশাসন ক্যাডারে। যা বশেমুরবিপ্রবির ইতিহাসে প্রথম । দিয়েছিলেন ৪০ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও।
বাংলাদেশের সুন্দরবন নিকটবর্তী বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার দিয়াপাড়া গ্রামের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান অভিজিৎ । ছোট বেলা থেকে ভদ্র আর শান্ত স্বভাবের তিনি। ডানপিটে আর দুরন্তপনাকে কখনই ঠাই দেননি আপনা চরিত্রে। আর তাই এলাকা ও শিক্ষকদের কাছেও বেশ প্রশংসনীয় ছিলেন তিনি। বাবা মোংলা বন্দরে চতুর্থ শ্রেণির একজন সরকারি কর্মচারী। সেই সুবাদে মোংলাতেই স্কুল জীবন শুরু হয় । পড়েছেন মোংলা স্কুল এন্ড কলেজে ।
 
বাবার ছোট চাকুরীর সামান্য বেতনেই তাদের পরিবার চলতো । তবে কোনদিন এসব সমস্যা কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি তার শিক্ষা জীবনে । দুইভাই ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী ছিলেন। বড় ভাই পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । তারও ইচ্ছে ছিল বড় ভাইয়ের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে সুযোগ হয়ে ওঠেনি । তারপরে বশেমুরবিপ্রবিতে চান্স পান । বড়ভাই তাকে শিক্ষা বিষয়ক সব ধরনের সহযোগিতা আর দিকনির্দেশনা দিতেন । প্রতিনিয়ত শোনাতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের বিসিএসে সফল হওয়ার গল্প । এসব গল্প শুনে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম থেকেই বিসিএসের স্বপ্ন দেখতেন তিনি । করেছিলেন তার সর্বাত্মক চেষ্টাও।
 
এই স্বপ্নজয়ী নিজের সফলতার ল্প শোনাতে গিয়ে বলেন, আসলে ছোট বেলা থেকে এপর্যন্ত আসতে নানা দুর্গম পথ অতিক্রম করতে হয়েছে । অসচ্ছল পরিবারের ছেলে হয়েও কখনো ভেঙে পড়িনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম থেকে টিউশনি করে নিজের খরচ চালিয়েছি। স্বপ্ন ছিল একটাই বিসিএস ক্যাডার হবো। আমার এ স্বপ্ন পূরণে সবচেয়ে বেশী অবদান আমার বড় ভাইয়ের। তার সঠিক দিক নির্দেশনায় ছোট থেকে বড় হওয়া। এমনকি অনার্সের প্রথম থেকে কোনো কোচিংয়ে না গিয়ে তার অনুপ্রেরণা আর দিকনির্দেশনায় বিসিএস পরীক্ষায় সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছি ।
 
বিসিএসে কিভাবে সফল হওয়া যায়? 
– বিসিএস পরীক্ষা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার । তাই যথেষ্ট ধৈর্য থাকতে হবে।
– কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য নিশ্চিত করে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ২য় বর্ষ থেকে কিছু সময় দিতে হবে । পরে ৩য় ও ৪র্থ বর্ষকে বিসিএসের জন্য পুরো কাজে লাগাতে হবে ।
– একাডেমিক পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি নিজেকে সহায়ক পাঠ্যক্রমে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
– প্রতি সেকেন্ড সময়কে কাজে লাগাতে হবে ।
– অযথা অনলাআইনে সময় ব্যায় করা বাদ দিতে হবে ।
– পড়া মনে রাখার জন্য লিখে লিখে পড়তে হবে।
– প্রতিদিন টার্গেট করে সেই টার্গেট পূরণের সর্বো।চ্চ চেষ্টা করতে হবে।
– অনেক বেশি বই না কিনে একটা বই ভালোভাবে বারবার পড়া উচিৎ।

এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা

এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা