বেরিয়ে আসছে ধর্ষক আজাদের নানা কুকর্ম, ফুসছে জনতা

ধর্ষক আজাদ
ধর্ষক আজাদ
মূর্ধন্য দিপু, বাংলাবার্তা
 

আজাদুর রহমান। ২৫ বছর বয়সী যুবক এক আতঙ্কের নাম। ধর্ষণ, গণধর্ষণসহ কুকর্ম করাই যার নিত্যদিনের কাজ। কানাইঘাট উপজেলার ৭ নং দক্ষিণ বানীগ্রাম ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রামের নুরুদ্দিনের ছেলে আজাদ। গোষ্ঠীর প্রভাব আর বিচারবিহীনতার দরূন আজাদের কুকর্মের ফিরিস্তি দিনদিন দীর্ঘ হচ্ছে।

 
সর্বশেষ গত বুধবার (১ জুলাই) স্থানীয় ব্রাহ্মণগ্রামে অস্ত্রের মুখে আজাদের নেতৃত্বে এক গৃহবধূকে (২২) গণধর্ষণ করা হয়। জানা যায়, এই গৃহবধূর স্বামী একজন নিম্নআয়ের মানুষ। উপজেলার গাছবাড়ি বাজারে ছোট্ট একটি দোকান রয়েছে তার। ঘটনার রাতে প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে বাড়ি ফিরতে পারেননি। এর সুযোগে একই গ্রামের নুরুদ্দিনের ছেলে আজাদ (২৫) ও তার সহযোগিরা (মুখোশধারি) তার মাটির ঘর কেটে ঘরে প্রবেশ করে ঘরে থাকা তার স্ত্রীর গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে চোখ বেধে গণধর্ষণ করে। গৃহবধূ এসময় চিৎকার করলেও বৃষ্টির কারণে আশপাশের লোকজন তা শুনতে পাননি। পাশবিকতার স্বীকার গৃহবধূকে এরইমধ্যে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।
 
গৃহবধূর স্বামী প্রতিবেদককে জানান, স্ত্রীকে হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়ে এনেছি। এখন রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তারপর থানায় মামলা দায়েরের জন্য যাবো। এখন গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে জানাচ্ছি।
 
এলাকা সূত্রে জানা যায়, ধর্ষক আজাদ কয়েকবছর আগে ‘শাহাবুদ্দিনের মিলে’ মশলা প্রস্তুত করতে গেলে মিল বন্ধ থাকার সুবাদে পাশ্ববর্তী উজানীপাড়া গ্রামের এক গৃহবধূকে আজাদ পরিত্যক্ত একটি ঘরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এছাড়াও ধর্ষক আজাদের পাশের বাড়ির প্রবাসী ব্যক্তির বাড়িতে থাকা দরিদ্র বোনের অবিবাহিত মেয়েকে অস্ত্রের মুখে দিনেদুপুরে ধর্ষণ করে।
 
ধর্ষক আজাদের গোষ্ঠীর হা. নিজাম উদ্দীন বলেন, আমি ফেইসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি বিষয়টি। সালিশি বিচারে ঘটনা বানচালের চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে হা. নিজাম জানান, আমরা এব্যাপারে কি করতে পারি? গণধর্ষণের বিচার আইনিভাবে হোক। আমাদের সহায়তা থাকবে।
 
আজাদের চাচাতো ভাই তাজুল ইসলাম জানান, আমার আপন চাচাতো ভাই, এক বাড়িতে থাকি। কিন্তু ওর পরিবারের সাথে আমার সম্পর্ক নেই। আমি কিছুই বলতে পারবো না। তবে বিচার কিংবা আইনিপদক্ষেপে যা হবে সেখানে আমার সমর্থন থাকবে।
 
কবির উদ্দিন নামের গ্রামের আরেকজন বলেন, আমি অভিযুক্তের বাড়িতে কথা বলেছি। ওরাও সালিশের মাধ্যমে সমাধান করতে বলছে। বিচার বানচালের প্রশ্নে তিনি জানান, আমরা গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা বসবো। আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে বিচার অমান্য করা প্রসঙ্গে বলেন, এক্ষেত্রে আমরা ‘একঘরে’ করে রাখা ছাড়াও অন্য কঠিন শাস্তির দিকে যাবো।
 
৭ নং ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. নিজাম উদ্দিন জানান, আমি অসুস্থ থাকায় এব্যাপারে পুরোপুরি অবগত নই। তবে নামাজ পরবর্তী মসজিদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে জানাতে পারবো।
 
এব্যাপারে কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দোহা পিপিএম অনলাইন পোর্টালকে জানিয়েছেন, ‘এ বিষয়ে এখনও আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। আমরা এখনই খোঁজ নিচ্ছি।’
 
ফুঁসছে জনতা:
গণধর্ষণের ঘটনায় পুরো উপজেলা জুড়ে চলছে আলোচনা। অনলাইন মাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের দোকান সবখানেই ঘুরেফিরে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা যেন টক অব দ্যা ডে। “৭ নং দক্ষিণ বানীগ্রাম ইউনিয়ন অনলাইন ফোরাম” এর শত শত সদস্য এই ঘটনায় ফুঁসে ওঠেছেন। তারা ইউপি কমপ্লেক্সের সামনে ছাড়াও ইউনিয়নের প্রতিটি বাজারে বিক্ষোভ কর্মসূচির পরিকল্পনা করছেন। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ঘটনার বিচার চেয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার কথাও জানান এই গ্রুপের কয়েকজন সদস্য।
 
এমডি/এমএইচ/বাংলাবার্তা