চট্টগ্রামে ২৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে উধাও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ!

পটিয়া প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের পটিয়া ও কর্ণফুলীতে ওমরা হজ্বের নামে ২৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অধ্যক্ষের প্রতারনার শিকার হয়ে গত বৃহস্পতিবার ওমরা হজ্ব পালন করতে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসেন ২৩ জন ওমরা হজ্ব যাত্রী।

অভিযুক্ত মাদ্রাসা অধ্যক্ষের নাম ওমর ফারুক জব্বারী। তিনি পটিয়া উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন আর্শিয়া গাউসিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং আল জব্বারী হজ্ব কাফেলার মালিক।

হজ্ব কাফেলাটির কার্যালয় চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা এলাকায়। ভুক্তভোগী কামরুন নাহার নামের এক ওমরা হজ্বের মহিলা যাত্রী জানান, ‘গত বৃহস্পতিবার ওমরা হজ্বের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে যায়। সেখানে গিয়ে আমরা প্রতারনার শিকার হয়ে বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে ফেরত আসি। আমিসহ পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলার মোট ২৩ জন ওমরা হজ্বে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসলেও প্রতারনা শিকার হয়ে যাওয়া হয়নি আমাদের। আমি পটিয়া উপজেলার শাহচান্দ আউলিয়া কামিল মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক মাওলানা হামিদুল হকের মাধ্যমে আল-জব্বারী হজ্ব কাফেলায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা জমা করি। জব্বারী হজ্ব কাফেলার সত্বাধিকারী মাওলানা ওমর ফারুক জব্বারী গত ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর নন্দনকানন এলাকায় পুলিশ প্লাজার ৮ম তলায় একটি হোটেলে আমাদের হজ্বগমনকারীদের কর্মশালা করান। পরে গত বুধবার আমাদের হাতে বিমানের টিকিট ও ভিসা দেওয়ার কথা থাকলেও বুধবার রাতে অধ্যক্ষ আমাদের জানান বৃহস্পতিবার সকালে টিকিট ও ভিসা প্রদান করবে। তার ভিত্তিতে আমরা বৃহস্পতিবার সকালে বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। আমাদের ফ্লাইট বৃহস্পতিার দুপুর সাড়ে বারোটায় বলে জানান মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ওমর ফারুক জব্বারী। কিন্তু অধ্যক্ষ ওইদিন আমাদের পাসপোর্ট ও টিকিট কিছু না দিয়ে মোবাইল বন্ধ রাখে। পরে যোগাযোগ করতে না পেরে দীর্ঘ ২ ঘন্টা অপেক্ষা থাকার পর আমরা বাড়িতে চলে আসি।’

উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল হক রাশেদ জানান, ‘আমার দুই স্বজনও এ মাওলনার নিকট প্রতারনার শিকার হয়েছেন। মাওলনা আবদুল জব্বার যিনি নিজের নামে রেজিষ্ট্রেশনবিহীন হজ্ব কাফেলা খুলে ২৩ জন ওমরাকারীগনের হতে জনপ্রতি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে মোট ২৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পবিত্র ওমরা নামে ব্যবসায়ী এ প্রতারকের শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।’

এদিকে অধ্যক্ষের এ ধরনের ঘৃন্যতর কাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পরলে পুরো পটিয়াসহ চট্টগ্রামে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্ঠি হয়েছে। আলম নামের এক ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত ফেইসবুকে লেখেন, ‘উক্ত মাওলানার বিরুদ্ধে ছাত্রদের উপবৃত্তির টাকা আত্বসাত করা, শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রাপ্য বেতন না দেওয়াসহ অনেক প্রমানিত অভিযোগ রয়েছে।’ জাহাঙ্গীর আলম নামের কুসুমপুরা ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য লিখেছেন, ‘যদি মৌলানা সাহেবরা প্রতারনা করে আমরা কোথায় যাব? আল্লাহ এদের হেদায়েত করুক।’ জাহেদ চৌধুরী নামের আরেক ব্যক্তি ফেইসবুকে লেখেন, ‘কিছুদিন যাবৎ কিছু সংখ্যক মৌলবীর অপকর্ম সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, আজ নিজের এলাকারটা দেখলাম। বিশ্বাসের জায়গাটা নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। ওকে ধরে আধ ঘন্টা জুতা পেঠা করা হোক।’

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান জানান, ‘এ ধরনের প্রতারক চক্র ধরার জন্য প্রশাসন তৎপর রয়েছে। মৌখিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পেলেও এখনও পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেন নি। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

অন্যদিকে দক্ষিন আর্শিয়া গাউসিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ওমর ফারুক জব্বারীর ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার (০১৮২৩-৩৮১০০৭) একাধিকবার যোগাযোগ করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি।