খাগড়াছড়িতে ব্যতিক্রমী রায়, নিজ বাড়িতেই সাজা খাটবেন আসামি!

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী অপরাধ প্রমানিত হলে আদালত আসামীকে সাজা দেয়। আর আসামীকে সাজা খাটতে হয় জেলখানায়। কিন্তু খাগড়াছড়িতে এক ব্যতিক্রমী রায়ে শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

মারধরের অভিযোগে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ হয়েছে। এরপরও আসামিকে জেলে না নিয়ে নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশেই এই ঘটনা ঘটেছে। আসামির নাম আব্দুস সামাদ। বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা উপজেলার লাম্বাছড়া গ্রামে। ১১ শর্ত মেনে সাজার ছয় মাস সময় এখন বাড়িতেই থাকবেন তিনি।

রবিবার (৫ জানুয়ারি) আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম জানান, এই ধরনের রায় খাগড়াছড়ি জেলায় প্রথম। প্রবেশন সংক্রান্ত হাইকোর্টের বিগত ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখের সার্কুলার নং জে-০১/২০১৯ অনুসারে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহীন হোসেন জানান, মাটিরাঙা উপজেলার লাম্বাছড়া গ্রামের আবদুর রহমান মিয়া ২০১৮ সালের মার্চ মাসে মারধরের অভিযোগে আব্দুস সামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে সামাদকে বিশেষ শর্তে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (প্রথম আদালত) সামিউল আলম। সেই আদেশ মতে আসামিকে জেল হাজতে না পাঠিয়ে কারাদণ্ড স্থগিত রেখে সমাজ সেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসারের কাছে প্রি-সেন্টেস রিপোর্ট তলব করেন আদালত। জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার গত ২ জানুয়ারি আসামি সামাদের অপরাধ ‘দি প্রবেশন অব অপেন্ডারস অ্যাক্ট, ১৯৬০ এর ৪(১)’ ধারা মতে, পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে, মামলাটি প্রবেশনযোগ্য বলে জানান। সেই প্রতিবেদন গ্রহণ করে আদালত জানায়, কারাদণ্ডকালীন ছয় মাস ১১ শর্ত মেনে বাড়িতেই থাকবেন সামাদ।

খাগড়াছড়ি আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার উদ্দিন মামুন রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বিচারক সামিউল আলম শুধু প্রবেশন সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করেননি, তিনি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে জেলখানার অপরাধীদের সংস্পর্শ থেকে বাঁচিয়েছেন। এতে ভবিষ্যতে আরও বড় অপরাধে জড়িত হওয়ার হাত থেকে তাকে রক্ষা করেছেন। এই রায় অনুসরণ করলে প্রথমবারের মতো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বড় অপরাধ থেকে দূরে রাখা যাবে, যার ফলে সমাজে অপরাধ কমবে।’