কুবি’র বাসেই শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির অভিযোগ

কুবি প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক ছাত্রীকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বাসে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বাস চালকের বিরুদ্ধে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সাথে পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন থেকে ভাড়া করা ৯ নং বাসে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার রাতেই এ ঘটনা উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করেন।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস  বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত বাস চালকের নাম খোকা।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী তার স্টেটাসে উল্লেখ করে লিখেন, “অসুস্থতার কারনে সকাল ১১ টার সময়ে অপেক্ষমাণ ৯ নম্বর বিআরটিসি বাসে উঠি । এসময় এক মামার কাছে এই বাস যাবে ১২টায় যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন যাবে।  বাসে উঠে বসার পরে ঘুম চলে আসছিল। ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি ১১টা২০ বাজে,বাস বেলতলীতে আর বাসে আমি, বাসের চালক আর একজন হেল্পার। মামা কে জিজ্ঞাসা করলাম মামা বাস কোথায় যাচ্ছে? মামা বলল ‘বেলতলিতে একটা বাস নষ্ট হয়ে আছে সেখানে যাচ্ছি। আবার ক্যাম্পাসে ফিরে যাব, ১২ টায় শহরে যাব।’ তারপর বাস ওই নষ্ট বাস এর কাছে গিয়ে হয়ত বাস কে গ্যাস দিয়েছে। তারপর বলল এই বাস গ্যাস নিয়ে শহরে যাবে। বিশ্বরোডের কাছাকাছি একটা গ্যাস ফিলিং স্টেশন আছে ওখানে গিয়ে মামা বলছিল ‘মামা এখানে দেরি হবে,আমরা ক্যাম্পাসে গিয়ে ২টায় শহরে যাব।’ আমাকে বলল ‘আপনি বসেন আমরা ১টায় ক্যাম্পাসে যাব’। এরপর তিনি বলল  ‘আপনাদের তো কাল থেকে ক্যাম্পাস বন্ধ। অনেক ডিপার্টমেন্ট কক্সবাজার ট্যুরে যাবে। আপনি যাবেন?’ আমি বললাম ‘ না যাবনা’। উনি বললেন,‘ আমি যাব যাওয়া আসা ফ্রি, থাকা খাওয়া শুধু নিজের। ২-৩দিন থাকব। আপনি গেলে তো আপনার সাথে দেখা হবে। ’ ঐ শিক্ষার্থী আরো অভিযোগ করেন, এরপর হঠাৎ মামা বলল, ‘আপনার নাম্বার টা দিবেন? আমি কক্সবাজার যাওয়ার আগে আপনাকে কল দিব। আপনি যাবেন কিনা এটা জানতে ’ আমি বললাম ‘আমি তো বললাম আমি যাবনা আপনি আমার নাম্বার চাচ্ছেন কেন?’  তখন তিনি বললেন ‘আচ্ছা নাম্বার না দিলে না দিবেন। জোর করব না। তারপর উনি দাঁড়িয়ে হেল্পার কে ডাক দিয়ে বলতেছে, ‘ দেখ পেট খালি পেটে কিছু নাই। এটা বলেই উনি উনার টিশার্ট বুকের উপর পর্যন্ত উঠিয়ে ফেলছে।’ তারপর আমাকে বলে ‘দেখেন ওরা আমার পেট কে হিংসা করে।’ ঐ শিক্ষার্থী আরো লিখেন, এরপর আমি বাস থেকে নেমে যাই। উনি আমার পিছন পিছন আসতে আসতে বলতেছে, ‘ আপনি নাম্বার টা দিলেন না। আপনাকে কক্সবাজার যাওয়ার আগে কল দিতাম। আর আমার তো ইচ্ছা করতেছে আমি একাই আপনাকে শহরে নিয়ে যাই।’  আচ্ছা আমরা মেয়েরা কি কোথাও সেইফ না? লোকাল বাস বাদ দিলাম ভার্সিটি বাসেও মেয়েদের হ্যারেস হতে হবে? ভার্সিটি বাসের মামার কিভাবে সাহস হয় এসব বলার?এর বিচার কি আদৌ পাব? ”

ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই ধরণের ঘটনার শিকার যাতে আর কাউকেই হতে না হয় তার জন্য অতিসত্তর এই ড্রাইভারের বহিষ্কার চাই এবং দৃষ্টান্দমূলক শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে পরবর্তীতে কেউ যাতে এমন কিছু করার কথা চিন্তাও না করতে পারে তার দাবি জানাচ্ছি। এই ড্রাইভারের যাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করা হয় এবং সে যেন অন্য কথাও চাকরি না পায় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বিআরটিসির বাস চালক খোকা বলেন, আমাদের বিআরটিসি বাস যায়। কখনও যদি (উনি) যায়, আমরা ড্রাইবার হিসেবে যাই এ রকম বলছি বলে স্বীকার করে।

তিনি আরো বলেন, আমি কক্সবাজারের বিষয়ে কোন কথা বলিনি । শার্ট বুকের উপরে উঠিয়ে ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি অন্য একজনের সাথে দুষ্টুমি করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোঃ মোকাদ্দেসুল-উল ইসলাম বলেন, এবিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেছে কিনা আমি জানি না। তবে এমনটি ঘটলে তা অবশ্যই বড় ঘটনা। কাল আমরা এসে নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা নিব।